২০১৮ সাল থেকে ভারত ও ইন্দোনেশিয়ার ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে সমুদ্র সহযোগিতার এক অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে।
ভারতের নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল দিনেশ কে ত্রিপাঠি ১৫ থেকে ১৮ ডিসেম্বর, ২০২৪ পর্যন্ত চার দিনের সরকারি সফরে ইন্দোনেশিয়া অবস্থান করছেন। এই সফরের মূল লক্ষ্য হলো দুই দেশের নৌবাহিনীর মধ্যে যৌথ কার্যক্রমে সহযোগিতার স্তর বৃদ্ধি করা। এটি ভারত ও ইন্দোনেশিয়ার দ্বিপাক্ষিক প্রতিরক্ষা সম্পর্ক আরও মজবুত করার প্রচেষ্টার অংশ, যা ব্যাপক কৌশলগত অংশীদারিত্বের অংশ হিসেবে গড়ে উঠছে।

সফরকালে অ্যাডমিরাল ত্রিপাঠি ইন্দোনেশিয়ার উচ্চপর্যায়ের সরকারি এবং প্রতিরক্ষা কর্মকর্তাদের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা করবেন। আলোচনায় থাকবেন ইন্দোনেশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রী লেফটেন্যান্ট জেনারেল শাফ্রি সজমসুদ্দিন (অবসরপ্রাপ্ত), ইন্দোনেশিয়ার সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান জেনারেল আগুস সুবিয়ান্তো এবং ইন্দোনেশিয়ার নৌবাহিনীর চিফ অব স্টাফ অ্যাডমিরাল মুহাম্মদ আলি।

ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মতে, এই আলোচনায় প্রতিরক্ষা সহযোগিতার বিস্তৃত ক্ষেত্রগুলো অন্তর্ভুক্ত থাকবে। বিশেষ করে, সমুদ্র নিরাপত্তা, যৌথ প্রশিক্ষণ কার্যক্রম এবং নৌবাহিনীগুলোর মধ্যে কার্যকরী সহযোগিতা আরও শক্তিশালী করার উপায় নিয়ে আলোচনা হবে।

সফরটি ভারত-ইন্দোনেশিয়া সমুদ্র সহযোগিতার অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ, যা ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে দুই দেশের দৃঢ় সামুদ্রিক সম্পর্কের প্রতিফলন। শনিবার (১৪ ডিসেম্বর, ২০২৪) প্রকাশিত এমওডি-এর এক বিবৃতিতে এ কথা জানানো হয়েছে।

ভারত ও ইন্দোনেশিয়ার নৌবাহিনীর মধ্যে বিদ্যমান সমুদ্র সহযোগিতা বিভিন্ন কার্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত, যার মধ্যে রয়েছে যৌথ মহড়া, বন্দর পরিদর্শন এবং সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম। দুই দেশের যৌথ সামরিক মহড়াগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘সমুদ্র শক্তি’ (নৌবাহিনী) এবং ‘গরুড় শক্তি’ (আর্মি স্পেশাল ফোর্স)। বর্তমানে, ৪৩তম ভারত-ইন্দোনেশিয়া সমন্বিত টহল ১০ থেকে ১৮ ডিসেম্বর, ২০২৪ পর্যন্ত আন্তর্জাতিক সামুদ্রিক সীমানা রেখা বরাবর পরিচালিত হচ্ছে।

দ্বিপাক্ষিক অংশীদারিত্বে সমুদ্র নিরাপত্তা সহযোগিতা গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ
২০১৮ সালে ভারত ও ইন্দোনেশিয়ার মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে ব্যাপক কৌশলগত অংশীদারিত্বে উন্নীত করার পর থেকে প্রতিরক্ষা, বাণিজ্য, বিনিয়োগ, সংস্কৃতি এবং জনগণ থেকে জনগণের বিনিময় সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে দৃঢ় সহযোগিতা দেখা গেছে। এর মধ্যে সমুদ্র নিরাপত্তা সহযোগিতা একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। উভয় দেশ ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে শান্তি ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার জন্য একসঙ্গে কাজ করছে।

২০১৮ সালের মে মাসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ইন্দোনেশিয়া সফরের সময় ভারত ও ইন্দোনেশিয়া ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে সমুদ্র সহযোগিতার একটি অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করে। এর লক্ষ্য হলো সুযোগগুলোর সদ্ব্যবহার করা এবং চ্যালেঞ্জগুলোর মোকাবিলা করা।

এই দৃষ্টিভঙ্গির আওতায় উভয় পক্ষ নিম্নলিখিত বিষয়ে একমত হয়: সমুদ্র নিরাপত্তা ও সুরক্ষা উন্নয়ন; বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহযোগিতা বৃদ্ধি; সামুদ্রিক সম্পদের টেকসই উন্নয়ন প্রচার; দুর্যোগ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনায় সহযোগিতা সম্প্রসারণ; পর্যটন ও সাংস্কৃতিক বিনিময় বৃদ্ধি; একাডেমিক, বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি সহযোগিতা শক্তিশালী করা।

উল্লেখযোগ্যভাবে, ২০২৪ সাল ভারতের ‘অ্যাক্ট ইস্ট’ নীতির দশম বর্ষপূর্তি চিহ্নিত করছে। এই নীতির অধীনে ভারত আসিয়ান দেশগুলোর সঙ্গে কৌশলগত ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা সক্রিয়ভাবে অনুসরণ করছে, যেখানে ইন্দোনেশিয়া ভারতের ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। সূত্র: ইন্ডিয়া নিউজ নেটওয়ার্ক।