পশ্চিম এশিয়ায় দীর্ঘমেয়াদি শান্তি, স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ভারতের অবিচল প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী মোদী
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সংযুক্ত আরব আমিরাতের উপ-প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ আবদুল্লাহ বিন জায়েদ আল নাহিয়ানকে স্বাগত জানিয়েছেন। বৃহস্পতি (১২ ডিসেম্বর, ২০২৪) নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত এই বৈঠক দুই দেশের সমন্বিত কৌশলগত অংশীদারিত্বকে শক্তিশালী করার ওপর গুরুত্বারোপ করেছে। প্রযুক্তি, জ্বালানি ও আঞ্চলিক সংযোগসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতার বিষয়টি আলোচনায় উঠে আসে।

প্রধানমন্ত্রী মোদী সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ানকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানান এবং দুই দেশের মধ্যে ঘনিষ্ঠ উচ্চপর্যায়ের সম্পর্কের প্রশংসা করেন। তিনি বিশেষভাবে উল্লেখ করেন, সেপ্টেম্বর ২০২৪-এ আবুধাবির ক্রাউন প্রিন্স শেখ খালেদ বিন মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ানের ভারত সফর, যা উভয় দেশের দৃঢ় সম্পর্কের ধারাবাহিকতার প্রতীক।

দুই নেতা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও উচ্চমাত্রায় উন্নীত করার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন। জনগণের মধ্যে সংযোগ বৃদ্ধি ও উদীয়মান প্রযুক্তি ও জ্বালানি নিরাপত্তায় সহযোগিতার সুযোগ নিয়ে কাজ করার গুরুত্বও আলোচনায় উঠে আসে।

ভারত-মধ্যপ্রাচ্য-ইউরোপ করিডর (আইএমইইসি) নিয়ে আলোচনা
আলোচনার একটি প্রধান বিষয় ছিল ভারত-মধ্যপ্রাচ্য-ইউরোপ করিডর (আইএমইইসি) বাস্তবায়ন। প্রধানমন্ত্রী মোদী এটিকে “ঐতিহাসিক উদ্যোগ” হিসেবে উল্লেখ করেন, যা আঞ্চলিক সংযোগ ও সমৃদ্ধি বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এই প্রকল্প ভারতকে মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপের সঙ্গে সংযুক্ত করবে, যা অঞ্চলগুলোর মধ্যে বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সংহতিকে ত্বরান্বিত করবে।

আইএমইইসি ভারতের বৈশ্বিক সংযোগ নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ এবং পশ্চিম এশিয়া ও ইউরোপে তার অর্থনৈতিক প্রভাব বিস্তারের কৌশলের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। শেখ আবদুল্লাহ এই প্রকল্পে সহযোগিতার ব্যাপারে সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন এবং এর আঞ্চলিক উন্নয়নে সম্ভাব্য প্রভাব নিয়ে আলোচনা করেন।

পশ্চিম এশিয়ার স্থিতিশীলতা নিশ্চিতকরণ
পশ্চিম এশিয়ার বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে শেখ আবদুল্লাহ তার দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী মোদী পুনর্ব্যক্ত করেন যে, ভারতের দীর্ঘমেয়াদি শান্তি, স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি অটুট। তিনি জোর দিয়ে বলেন, পশ্চিম এশিয়ায় শান্তি বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ও কৌশলগত স্থিতিশীলতার জন্য অপরিহার্য, কারণ এটি জ্বালানি সম্পদ ও বাণিজ্যপথের একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র।

দুই দেশের অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি পশ্চিম এশিয়ার শান্তি ও সমৃদ্ধির লক্ষ্যকে কেন্দ্র করে আরও গভীর সহযোগিতার সুযোগ তৈরি করবে বলে আলোচনা হয়।

প্রধানমন্ত্রী মোদী সংযুক্ত আরব আমিরাতের নেতৃত্বের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। আমিরাতে বসবাসরত ভারতীয় প্রবাসীরা দেশটির অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে এবং দুই দেশের সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করে।

ভারত-সংযুক্ত আরব আমিরাতের সমন্বিত কৌশলগত অংশীদারিত্বের ভিত্তি হয়ে উঠেছে উপসাগরীয় অঞ্চলে ভারতের অংশগ্রহণের অন্যতম মূল স্তম্ভ। এই অংশীদারিত্ব এখন বাণিজ্য ও জ্বালানির পাশাপাশি আঞ্চলিক নিরাপত্তা, প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন এবং জলবায়ু স্থিতিস্থাপকতা নিয়ে কাজ করছে।

আইএমইইসি বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রীর গুরুত্বারোপ ভারতের অর্থনৈতিক শক্তি ও ভৌগোলিক অবস্থানকে কাজে লাগিয়ে এমন সংযোগ কাঠামো তৈরি করার প্রচেষ্টা প্রকাশ করে, যা যৌথ সমৃদ্ধি বয়ে আনবে। সংযুক্ত আরব আমিরাত তার কৌশলগত অবস্থান ও অর্থনৈতিক সামর্থ্যের মাধ্যমে এই দৃষ্টিভঙ্গি বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

শেখ আবদুল্লাহ বিন জায়েদ আল নাহিয়ানের ভারত সফর দুই দেশের সম্পর্ক আরও গভীর করার আরেকটি পদক্ষেপ। ভারত-সংযুক্ত আরব আমিরাতের অংশীদারিত্ব আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক ভূরাজনীতিতে বিস্তৃত প্রভাব রাখছে। আইএমইইসি-এর মাধ্যমে দুই দেশ বাণিজ্যপথ পুনরায় সংজ্ঞায়িত করতে এবং এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপ জুড়ে অর্থনৈতিক সংহতি বৃদ্ধির লক্ষ্য নিয়েছে।

পশ্চিম এশিয়ার স্থিতিশীলতায় গুরুত্ব প্রদান ভারতের জ্বালানি সরবরাহ সুরক্ষা এবং অর্থনৈতিক সহযোগিতার জন্য শান্তিপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টির কৌশলের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। অঞ্চলটির মধ্যস্থতাকারী হিসেবে সংযুক্ত আরব আমিরাতের ভূমিকা ভারতের শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রচেষ্টাকে আরও শক্তিশালী করে।

প্রধানমন্ত্রী মোদী ও শেখ আবদুল্লাহ বিন জায়েদ আল নাহিয়ানের মধ্যে আলোচনা ভারত ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের মধ্যে সহযোগিতা আরও জোরদার করার একটি মাইলফলক স্থাপন করেছে। আইএমইইসি এবং অন্যান্য কৌশলগত উদ্যোগ বাস্তবায়নের মাধ্যমে এই অংশীদারিত্ব নতুন উচ্চতায় পৌঁছাবে।

সংযোগ, আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা এবং অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির অভিন্ন লক্ষ্য নিয়ে ভারত-সংযুক্ত আরব আমিরাত অংশীদারিত্ব বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় এবং তাদের জনগণ ও বৃহত্তর অঞ্চলের জন্য একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ সৃষ্টিতে পথিকৃৎ হিসেবে কাজ করছে। সূত্র: ইন্ডিয়া নিউজ নেটওয়ার্ক।