সমুদ্র নিরাপত্তা ও সক্ষমতা বৃদ্ধিতে ভারত এবং ফিলিপাইন একসঙ্গে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার অঙ্গীকার করেছে।
দীর্ঘদিনের বিশ্বাসযোগ্য দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে আরও গভীর করার লক্ষ্যে ভারত এবং ফিলিপাইন ম্যানিলায় প্রথম ভারত-ফিলিপাইন মেরিটাইম ডায়ালগ আয়োজন করেছে। এই আলোচনা ভারত ও ফিলিপাইনের মধ্যে ৭৫ বছরের কূটনৈতিক সম্পর্ক উদযাপনের সঙ্গে মিল রেখে অনুষ্ঠিত হয়, যা দুই দেশের টেকসই অংশীদারিত্বকে তুলে ধরে।

আলোচনায় আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং আন্তর্জাতিক সমুদ্র আইন মেনে চলার অভিন্ন আকাঙ্ক্ষা তুলে ধরা হয়। দুই দেশ দক্ষিণ চীন সাগরের ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে বিদ্যমান সমুদ্র চ্যালেঞ্জগুলো নিয়ে মতবিনিময় করে। তারা বিশেষভাবে জাতিসংঘ সমুদ্র আইন-এর ভিত্তিতে নিয়মতান্ত্রিক আন্তর্জাতিক শৃঙ্খলার প্রতি প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করে।

মূল বিষয়গুলো
সমুদ্র অর্থনীতি: সমুদ্র খাতে বাণিজ্য বৃদ্ধি এবং টেকসই অর্থনৈতিক সুযোগ অন্বেষণে একসঙ্গে কাজ করার বিষয়ে দুই পক্ষ সম্মত হয়।
সামুদ্রিক গবেষণা: সমুদ্র বিজ্ঞান নিয়ে যৌথ গবেষণা কার্যক্রমের মাধ্যমে জ্ঞান বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
মানবিক সহায়তা ও দুর্যোগ ত্রাণ: প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও জরুরি অবস্থার জন্য যৌথ প্রতিক্রিয়া ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করার পরিকল্পনা করা হয়।
নৌবাহিনী ও কোস্ট গার্ড সহযোগিতা: সমুদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নৌ ও কোস্ট গার্ডের মধ্যে অপারেশনাল সম্পৃক্ততা বৃদ্ধি করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

অবৈধ মৎস্য শিকার, জলদস্যুতা এবং পাচার প্রতিরোধে পারস্পরিক অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করার বিষয়ে আলোচনা হয়। আলোচনায় আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক মঞ্চে একসঙ্গে কাজ করার বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে তুলে ধরা হয়। ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে শান্তি এবং সমৃদ্ধি নিশ্চিত করার লক্ষ্য দুই দেশের অভিন্ন উদ্দেশ্যকে আরও শক্তিশালী করে।

দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের সামরিক আগ্রাসনের প্রেক্ষাপটে এই আলোচনা গুরুত্বপূর্ণ। চীন এই সম্পদসমৃদ্ধ সাগরের প্রায় পুরো অংশে সার্বভৌমত্ব দাবি করছে, যা ভিয়েতনাম, ফিলিপাইন এবং ব্রুনেইর মতো দেশগুলোর সাথে বিরোধ সৃষ্টি করেছে।

ভারত বরাবরই শান্তিপূর্ণ সমাধান এবং আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলার পক্ষে সমর্থন জানিয়ে আসছে। আলোচনায় ভারত ও ফিলিপাইন কৌশলগত সমুদ্রপথগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে একত্রে কাজ করার গুরুত্ব পুনর্ব্যক্ত করে।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, “আলোচনাগুলো আমাদের পারস্পরিক প্রবৃদ্ধি এবং বৈশ্বিক কল্যাণের জন্য একটি অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টির প্রতি আমাদের অভিন্ন প্রতিশ্রুতি জোরদার করেছে।”

ভারত এবং ফিলিপাইনের প্রতিরক্ষা সম্পর্ক সাম্প্রতিক বছরগুলোতে উল্লেখযোগ্য উন্নতি লাভ করেছে। এই বছরের শুরুর দিকে ভারত ফিলিপাইনে প্রথম ব্যাচের ব্রহ্মোস সুপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহ করেছে। ৩৭৫ মিলিয়ন ডলারের এই চুক্তি দুই দেশের কৌশলগত সম্পর্কের গভীরতা প্রতিফলিত করে।

এই মেরিটাইম ডায়ালগের সময় ভারত ও ফিলিপাইন তাদের ৭৫ বছরের কূটনৈতিক সম্পর্ক উদযাপন করছে। ২০২৪ সালের নভেম্বরে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এস. জয়শঙ্কর এবং ফিলিপাইনের রাষ্ট্রদূত জোসেল এফ. ইগনাসিও যৌথ স্মারক লোগো উন্মোচন করেন। লোগোতে উভয় দেশের জাতীয় পতাকার উপাদান, যেমন অশোক চক্র এবং সূর্য, ময়ূর এবং ঈগল চিত্রিত হয়েছে।

এই উদযাপন ভারতের ‘অ্যাক্ট ইস্ট পলিসি’র দশম বার্ষিকীর সঙ্গেও মিল রেখেছে, যা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক আরও গভীর করার লক্ষ্যে চালু হয়েছিল।

২০২৫ সালে নয়াদিল্লিতে পরবর্তী মেরিটাইম ডায়ালগ আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ফিলিপাইনের অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি মার্শাল লুইস আলফেরেজ বলেন, “এই ডায়ালগ আমাদের সমুদ্র অঞ্চলে শান্তি ও সমৃদ্ধির অভিন্ন লক্ষ্য পুনরায় নিশ্চিত করেছে।”

ভারত ও ফিলিপাইন তাদের সমুদ্র নিরাপত্তা সহযোগিতার মাধ্যমে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটকে প্রভাবিত করার পথে এগিয়ে যাচ্ছে। এই সম্পর্ক উন্মুক্ত এবং নিয়মভিত্তিক সমুদ্র শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার অভিন্ন অঙ্গীকারকে প্রতিফলিত করে, যা পারস্পরিক প্রবৃদ্ধি এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য শক্তিশালী ভিত্তি প্রদান করছে। সূত্র: ইন্ডিয়া নিউজ নেটওয়ার্ক।