মিয়ানমারের ইয়াঙ্গুন অঞ্চলের মুখ্যমন্ত্রী ইউ সো থেইন ভারতের সরকারকে এই বদান্যতার জন্য কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন।
আঞ্চলিক সংহতি ও মানবিক দায়িত্বের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করে, ভারত মিয়ানমারের বন্যাদুর্গতদের জন্য ২২০০ টন চাল দান করেছে। টাইফুন ইয়াগির প্রভাবে সৃষ্ট বিপর্যয়ে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর উদ্দেশ্যে এই সহায়তা প্রদান করা হয়। বুধবার (১১ ডিসেম্বর, ২০২৪) ইয়াঙ্গুনের এশিয়া ওয়ার্ল্ড বন্দরে এক আনুষ্ঠানিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এই ত্রাণ সামগ্রী হস্তান্তর করা হয়। অনুষ্ঠানে উভয় দেশের শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ইয়াঙ্গুন অঞ্চলের মুখ্যমন্ত্রী ইউ সো থেইন, আঞ্চলিক মন্ত্রী, মিয়ানমারে ভারতের রাষ্ট্রদূত অভয় ঠাকুর, মিয়ানমার রেড ক্রস সোসাইটির প্রতিনিধিরা এবং ইয়াঙ্গুন অঞ্চল দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের কর্মকর্তারা। এই উদ্যোগ ভারতের “অ্যাক্ট ইস্ট” ও “প্রতিবেশী প্রথম” নীতির অধীনে আঞ্চলিক সহযোগিতার প্রতিফলন।
রাষ্ট্রদূত অভয় ঠাকুর বলেন, “মিয়ানমারের বন্ধুসুলভ জনগণের প্রতি সহায়তার প্রতিশ্রুতি রক্ষার এক অনন্য উদাহরণ এই ২২০০ টন চালের দান। এটি ভারত ও মিয়ানমারের স্থায়ী বন্ধুত্ব ও সহযোগিতার চেতনার পরিচায়ক।” ভারতের দূতাবাস এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, এই উদ্যোগ আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ও অংশীদারিত্ব নিশ্চিত করতে ভারতের অঙ্গীকারেরই প্রতিফলন।
ইয়াঙ্গুনের মুখ্যমন্ত্রী ইউ সো থেইন ভারতের সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়ে এক সম্মাননা সনদ তুলে দেন। আনুষ্ঠানিকতা শেষে উপস্থিত কর্মকর্তারা চালভর্তি কনটেইনারগুলো পরিদর্শন করেন, যা দীর্ঘ পরিকল্পনা ও লজিস্টিক সমন্বয়ের পর মিয়ানমারে পৌঁছেছে।
অপারেশন সদ্ভাব
এই চালের দান ভারতীয় মানবিক মিশন “অপারেশন সদ্ভাব”-এর অংশ, যা টাইফুন ইয়াগির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর জন্য জরুরি ত্রাণ সরবরাহের উদ্যোগ। এই মিশনের মাধ্যমে মিয়ানমার, লাওস, ও ভিয়েতনামের মতো দেশগুলোতে সাহায্য পাঠানো হয়েছে। দক্ষিণ চীন সাগরে উৎপন্ন টাইফুন ইয়াগি এ বছর এশিয়ায় সবচেয়ে বিধ্বংসী ঝড় হিসেবে আঘাত হানে, যার ফলে ভিয়েতনামে ১৭০ জন এবং মিয়ানমারে ৪০ জনের মৃত্যু হয় এবং হাজার হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়।
ভারতীয় বিমান বাহিনী এবং নৌবাহিনী এই মিশনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সি-১৭ গ্লোবমাস্টার বিমান এবং ভারতীয় নৌবাহিনীর জাহাজ আইএনএস সতপুড়া ব্যবহার করে ত্রাণ সামগ্রী সরবরাহ করা হয়। মিয়ানমারের চাল ছাড়াও, ভিয়েতনামে ৩৫ টন এবং লাওসে ১০ টন জরুরি সামগ্রী পাঠানো হয়, যার মধ্যে ছিল পানিশোধন যন্ত্র, কম্বল, সৌর লণ্ঠন, স্বাস্থ্যবিধি সামগ্রী এবং শুকনো খাদ্য।
পররাষ্ট্র মন্ত্রী এস জয়শঙ্কর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ মিশনটির প্রশংসা করে বলেন, “ভারত শুরু করেছে #অপারেশনসদ্ভাব। টাইফুন ইয়াগিতে ক্ষতিগ্রস্ত জনগণের প্রতি সংহতি প্রকাশ করে মিয়ানমার, ভিয়েতনাম এবং লাওসে সাহায্য পাঠানো হচ্ছে।”
বন্যার কারণে মিয়ানমারে সংকট আরও তীব্র আকার ধারণ করেছে। মিয়ানমার বর্তমানে ভূমি মাইনের কারণে বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক দেশগুলোর একটি। ২০২৩ সালে মাইন বিস্ফোরণে ১,০৫২ জন বেসামরিক নাগরিকের মৃত্যু হয়েছে, যার ২০ শতাংশই শিশু। এই পরিসংখ্যান মিয়ানমারের ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর করুণ অবস্থার চিত্র তুলে ধরে।
ভারতের এই সাহায্য এমন এক সময়ে এসেছে, যখন মিয়ানমারের বন্যাদুর্গতরা পুনর্বাসনের চেষ্টা করছে। ইয়াঙ্গুনের মুখ্যমন্ত্রী উল্লেখ করেন, এই ধরনের দান বন্যাদুর্গতদের দুঃখ-দুর্দশা লাঘবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
ভারতের কৌশলগত মানবিক কূটনীতি
মিয়ানমার ছাড়াও ভারতের ত্রাণ কার্যক্রম আঞ্চলিক সহযোগিতার একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। অপারেশন সদ্ভাবের সফলতা ভারতের দ্রুত এবং কার্যকরভাবে সম্পদ ব্যবস্থাপনার সক্ষমতাকে প্রমাণ করে। এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলে মানবিক সহায়তার ক্ষেত্রে এটি ভারতকে নেতৃত্বের আসনে বসিয়েছে।
“অ্যাক্ট ইস্ট” এবং “প্রতিবেশী প্রথম” নীতির মাধ্যমে ভারত আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ও সহযোগিতা বৃদ্ধি করছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের বাড়তি চাপ সামাল দিতে ভারতের এই মানবিক কাঠামো আন্তর্জাতিক সাহায্যের ক্ষেত্রে একটি মানদণ্ড স্থাপন করেছে।
মিয়ানমারের জন্য ২২০০ টন চাল দানের এই উদ্যোগ শুধু দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে দৃঢ় করছে না, বরং একটি গুরুত্বপূর্ণ মানবিক সংকট মোকাবিলায় সহায়তাও করছে। ভারতের এই উদ্যোগ দুই দেশের বন্ধুত্ব ও সহযোগিতার প্রতীক হয়ে থাকবে।
মানবিক সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে ভারত আঞ্চলিক একতা ও সহনশীলতা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে একটি অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। অপারেশন সদ্ভাবের ধারাবাহিক সফলতা ভারতের একটি দয়াশীল এবং নির্ভরযোগ্য প্রতিবেশী হিসেবে অবস্থানকে আরও সুদৃঢ় করেছে। সূত্র: ইন্ডিয়া নিউজ নেটওয়ার্ক।