ইরান-আর্মেনিয়ার সঙ্গে ত্রিপাক্ষিক কাঠামো আইএনএসটিসি ও পারস্য উপসাগর-ব্ল্যাক সি করিডোরের লক্ষ্য এগিয়ে নিচ্ছে ভারত।
ভারত, ইরান এবং আর্মেনিয়ার মধ্যে দ্বিতীয় ত্রিপাক্ষিক আলোচনা বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর, ২০২৪) নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই আলোচনার মাধ্যমে আঞ্চলিক সহযোগিতা, সংযোগ বৃদ্ধি এবং বাণিজ্যিক উন্নয়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ অতিক্রম করা হয়েছে। তিন দেশের সিনিয়র কর্মকর্তারা যৌথ লক্ষ্যের বিষয়ে আলোচনা করেন, যার মধ্যে রয়েছে সংযোগ প্রকল্প, বহুপাক্ষিক প্ল্যাটফর্মে অংশগ্রহণ এবং জনগণের মধ্যে সম্পর্ক জোরদার করা।

ভারতীয় প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পাকিস্তান-আফগানিস্তান-ইরান (পিএআই) ডিভিশনের যুগ্ম সচিব জেপি সিং। ইরানের পক্ষে প্রতিনিধিত্ব করেন দক্ষিণ এশিয়া বিভাগের মহাপরিচালক হাশেম আশজা জাদেহ, এবং আর্মেনিয়ার পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন এশিয়া-প্যাসিফিক বিভাগের প্রধান আনাহিত কারাপেটিয়ান।

নয়াদিল্লির আলোচনা আর্মেনিয়ার ইয়ারেভানে ২০২৩ সালের এপ্রিলে অনুষ্ঠিত প্রথম ত্রিপাক্ষিক আলোচনার ধারাবাহিকতা। এই আলোচনায় আন্তর্জাতিক উত্তর-দক্ষিণ পরিবহন করিডোর (আইএনএসটিসি) এবং চাবাহার বন্দরের কৌশলগত গুরুত্বের ওপর বিশেষ জোর দেওয়া হয়।

চাবাহার বন্দর ও আইএনএসটিসি-এর গুরুত্ব
এই আলোচনা আইএনএসটিসি-কে কেন্দ্র করে অনুষ্ঠিত হয়, যা একটি বহুমুখী বাণিজ্য রুট হিসেবে দক্ষিণ এশিয়াকে ইউরোপের সঙ্গে সংযুক্ত করে ইরান এবং ককেশাসের মাধ্যমে। তিন দেশই করিডোরটির কার্যকারিতা বৃদ্ধির ব্যাপারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। চাবাহার বন্দর এখানে একটি কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করে।

চাবাহার বন্দর ভারতের আঞ্চলিক সংযোগ কৌশলে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি মধ্য এশিয়ায় পৌঁছানোর একটি প্রবেশদ্বার হিসেবে কাজ করে এবং পাকিস্তানকে বাইপাস করে। এছাড়া, বন্দরটি একতরফা নিষেধাজ্ঞা থেকে অব্যাহতি পাওয়ার ফলে এর উন্নয়ন ও কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে সুবিধা হয়েছে।

আর্মেনিয়ার “ক্রসরোডস অফ পিস” উদ্যোগ আইএনএসটিসি-এর পরিপূরক হিসেবে কাজ করে এবং ককেশাস অঞ্চলের মধ্য দিয়ে অতিরিক্ত সংযোগ রুট সরবরাহ করে। এটি পারস্য উপসাগর-ব্ল্যাক সি করিডোর উন্নয়নের ইরানের প্রচেষ্টার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

ত্রিপাক্ষিক সহযোগিতার ভূরাজনৈতিক তাৎপর্য
ভারত, ইরান এবং আর্মেনিয়ার ত্রিপাক্ষিক সহযোগিতা আজারবাইজান-তুরস্ক-পাকিস্তান গোষ্ঠীর মতো অন্যান্য আঞ্চলিক জোটের ভারসাম্য বজায় রাখার লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছে। সামরিক জোটের পরিবর্তে অর্থনৈতিক ও পরিবহন উদ্যোগের মাধ্যমে “সফট ব্যালেন্সিং”-এ মনোযোগ দিচ্ছে তারা।

ইরান আর্মেনিয়ার স্যুনিক প্রদেশে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে এবং আজারবাইজানের প্রস্তাবিত জানগেজুর করিডোরের বিরোধিতা করছে। এটি অঞ্চলে ইরানের প্রভাব ধরে রাখার কৌশলগত আগ্রহকে প্রতিফলিত করে।

অবকাঠামোগত চ্যালেঞ্জ ও সমাধান
আইএনএসটিসি সম্ভাবনাময় হলেও আর্মেনিয়ায় অবকাঠামোগত সীমাবদ্ধতা উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জ হিসেবে রয়ে গেছে। ইরানের সাথে সংযোগকারী রেলপথের অভাব এবং ইয়েরেভান থেকে মেঘরি পর্যন্ত সীমান্ত সংযোগকারী রাস্তা সংকীর্ণ হওয়ায় বাণিজ্য কার্যক্রম ধীর হয়ে যায়।

অন্যদিকে, আজারবাইজানের উন্নত ট্রানজিট অবকাঠামো আইএনএসটিসি-এর কার্যকর রুট প্রদান করে। তবে, ইরান কিছু বাণিজ্য গতিপথ আজারবাইজান থেকে আর্মেনিয়া এবং জর্জিয়ার রুটে স্থানান্তরের উপায় অনুসন্ধান করছে।

সমাপ্তি ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
ভারতের জন্য ইরান ও আর্মেনিয়ার সঙ্গে এই ত্রিপাক্ষিক কাঠামো আইএনএসটিসি এবং পারস্য উপসাগর-ব্ল্যাক সি করিডোরের বৃহত্তর লক্ষ্যকে সহায়তা করে। এটি মধ্য এশিয়া ও ব্ল্যাক সি অঞ্চলে ভারতের অর্থনৈতিক ও ভূরাজনৈতিক অবস্থানকে শক্তিশালী করবে।
ত্রিপাক্ষিক আলোচনার পরবর্তী পর্ব ইরানে অনুষ্ঠিত হবে। এই সহযোগিতার মাধ্যমে দক্ষিণ এশিয়া, পশ্চিম এশিয়া এবং দক্ষিণ ককেশাসে স্থিতিশীলতা ও বিকাশের একটি নতুন যুগ শুরু হবে। সূত্র: ইন্ডিয়া নিউজ নেটওয়ার্ক।