গগনযান মিশন সফল করতে মহাকাশ থেকে নিরাপদে ক্রু ফিরিয়ে আনার পথে বড় অগ্রগতি ভারতের নৌবাহিনী এবং ইসরো।
ভারতীয় নৌবাহিনী এবং ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (ইসরো) গগনযান, ভারতের প্রথম মানব মহাকাশ অভিযানের প্রস্তুতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক অর্জন করেছে। ২০২৪ সালের ৬ ডিসেম্বর বিশাখাপত্তনম উপকূলে পূর্ব নৌ কমান্ডের একটি জাহাজ ব্যবহার করে সফল ‘ওয়েল ডেক’ পুনরুদ্ধার পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে।
এই পরীক্ষা গগনযানের ক্রু মডিউল (সিএম) সমুদ্রের জলে অবতরণের পর নিরাপদ পুনরুদ্ধারের জন্য বিভিন্ন কঠোর পরীক্ষার অংশ। এই কার্যক্রম মহাকাশচারীদের মিশনের পর সুরক্ষা ও আরামের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
‘ওয়েল ডেক’ হল নৌবাহিনীর নির্দিষ্ট জাহাজগুলোর একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য, যা ডেকে পানি ভরার মাধ্যমে নৌকা, ল্যান্ডিং ক্রাফট বা গগনযানের মতো মহাকাশযান সহজে পুনরুদ্ধার ও ডকিং করতে সক্ষম করে। এই পদ্ধতিতে মডিউলটিকে জাহাজে টেনে নিয়ে আসা হয়, যেখানে মহাকাশচারীরা নিরাপদে এবং আরামে জাহাজ থেকে নামতে পারেন।
পরীক্ষার সময় একটি কৃত্রিম ক্রু মডিউল মকআপ ব্যবহার করা হয়েছিল, যা প্রকৃত মহাকাশযানের ভর এবং আকৃতির সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। এই অনুশীলনে বিভিন্ন জটিল পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া অন্তর্ভুক্ত ছিল, যেমন:
মডিউলে পুনরুদ্ধার বয়া সংযুক্ত করা, মডিউলটিকে ওয়েল ডেক জাহাজে টেনে নেওয়া, মডিউলটিকে ওয়েল ডেকে প্রবেশ করানো, একটি নির্ধারিত ফিক্সচারে মডিউলটি স্থাপন করা, এবং ক্রু অপসারণের জন্য ওয়েল ডেক থেকে পানি সরানো।
এই কার্যক্রমগুলো পুনরুদ্ধারের জন্য নির্ধারিত প্রক্রিয়ার কার্যকারিতা যাচাই করে এবং SOP (স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর) আরও উন্নত করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রদান করে।
গগনযান মিশন হল ভারতের প্রথম মহাকাশচারী পাঠানোর প্রকল্প। এই মিশন তিন দিনের জন্য মহাকাশে পৃথিবীর কক্ষপথ প্রদক্ষিণ করবে এবং নিরাপদে পৃথিবীতে ফিরে আসবে। পুনরুদ্ধার কার্যক্রম মিশনের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যা মহাকাশচারীদের দ্রুত এবং আরামদায়ক পুনরুদ্ধার নিশ্চিত করে।
৬ ডিসেম্বরের পরীক্ষা গগনযানের প্রস্তুতির অংশ হিসাবে আগে পরিচালিত পুনরুদ্ধার অনুশীলনের উপর ভিত্তি করে তৈরি। দ্বিতীয় ধাপের পরীক্ষা, যা হারবার ট্রায়াল নামে পরিচিত, ২০২৩ সালের জুলাই মাসে বিশাখাপত্তনমের নৌ ঘাঁটিতে শুরু হয়েছিল। এই সময়েও কৃত্রিম ক্রু মডিউল ব্যবহার করে বিভিন্ন প্রক্রিয়া পরীক্ষা করা হয়, যেমন পুনরুদ্ধার বয়া সংযুক্তি, টানা, পরিচালনা এবং জাহাজের ডেকে মডিউল তোলা।
সম্প্রতি পরিচালিত ‘ওয়েল ডেক’ পরীক্ষা গগনযান পুনরুদ্ধার কার্যক্রমে একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি। এর মাধ্যমে মডিউলের ভর, আকৃতি এবং পুনরুদ্ধার ক্রমকে বাস্তব পরিস্থিতিতে পরীক্ষা করা হয়েছে। এই পরীক্ষাগুলো নিশ্চিত করেছে যে:
ক্রু মডিউল এবং মহাকাশচারীদের দ্রুত সময়ে পুনরুদ্ধার করা সম্ভব, পুনরুদ্ধার কার্যক্রম সর্বোচ্চ সুরক্ষা ও আরামের সাথে সম্পন্ন হয়, এবং জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুতি গড়ে তোলা হয়।
গগনযান মিশন শীঘ্রই চালু হতে চলেছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে ভারত ক্রু মহাকাশ মিশন পরিচালনায় সক্ষম কিছু দেশের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হবে। ইসরো এবং ভারতীয় নৌবাহিনীর সহযোগিতা এমন একটি বহুমুখী প্রচেষ্টার উদাহরণ, যা এই জটিল সাফল্য অর্জনের জন্য প্রয়োজন।
ইসরো মহাকাশযান উন্নয়ন, প্রপালশন সিস্টেম এবং মিশন পরিকল্পনার নেতৃত্ব দিচ্ছে, যখন ভারতীয় নৌবাহিনী মহাকাশচারীদের সুরক্ষার দিকটি নিশ্চিত করছে। এই পরীক্ষা থেকে প্রাপ্ত তথ্য ভবিষ্যতের জন্য এসওপি চূড়ান্ত করতে সহায়ক হবে।
গগনযান মিশনের সফল বাস্তবায়ন শুধুমাত্র একটি প্রযুক্তিগত মাইলফলক নয়, এটি মহাকাশ গবেষণায় ভারতের অদম্য দৃঢ় সংকল্প এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করার একটি প্রমাণ। সূত্র: ইন্ডিয়া নিউজ নেটওয়ার্ক।