ভারতীয় নৌবাহিনীর জন্য আইএনএস তুষিলের অন্তর্ভুক্তি সমুদ্রসীমা রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ বলে ধারণা বিশ্লেষকদের।
ভারতীয় নৌবাহিনীর অত্যাধুনিক স্টিলথ-গাইডেড মিসাইল ফ্রিগেট ‘আইএনএস তুষিল’ ৯ ডিসেম্বর ২০২৪ তারিখে রাশিয়ার ক্যালিনিনগ্রাদের ইয়ান্তার শিপইয়ার্ডে একটি উঁচু পর্যায়ের অনুষ্ঠানে কমিশন করা হবে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং এবং ভারত ও রাশিয়ার উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা এ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন। এটি ভারত-রাশিয়া প্রতিরক্ষা সহযোগিতার একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক এবং নৌবাহিনীর আধুনিকীকরণ প্রচেষ্টার একটি বড় পদক্ষেপ।
‘আইএনএস তুষিল’ অন্তর্ভুক্তি ভারতীয় নৌবাহিনীর সমুদ্রসীমা রক্ষা সক্ষমতা বাড়ানো এবং পশ্চিম ফ্লিটের কার্যক্ষমতা উন্নত করার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এটি ক্রিভাক-৩ সিরিজের উন্নত ‘প্রজেক্ট ১১৩৫.৬’ ফ্রিগেটের অন্তর্গত, যা ভারতীয় নৌবাহিনীর অস্ত্রাগারে একটি শক্তিশালী সংযোজন।
২০১৬ সালে ভারত ও রাশিয়ার মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তির অধীনে নির্মিত দুটি উন্নত ফ্রিগেটের মধ্যে ‘আইএনএস তুষিল’ প্রথম। ‘তুষিল’ শব্দের অর্থ ‘রক্ষাকবচ’, আর এর মূলমন্ত্র হলো “নির্ভয়, অভেদ্য ও বলশীল”।
যুদ্ধজাহাজটির নির্মাণ কাজ ভারতীয় দূতাবাসের মস্কো শাখার অধীনে ক্যালিনিনগ্রাদে অবস্থানরত ভারতীয় যুদ্ধজাহাজ তদারকি দলের মাধ্যমে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে। জাহাজটি বিস্তৃত পরীক্ষার মধ্য দিয়ে গেছে, যার মধ্যে রয়েছে ফ্যাক্টরি সি ট্রায়াল, স্টেট কমিটি ট্রায়াল এবং ডেলিভারি অ্যাকসেপ্টেন্স ট্রায়াল। এসব পরীক্ষায় অস্ত্র, প্রপালশন সিস্টেম এবং জাহাজের সামগ্রিক সক্ষমতা মূল্যায়ন করা হয়েছে। পরীক্ষায় জাহাজটি ৩০ নট (৫৫ কিমি/ঘণ্টা) গতিবেগ অর্জন করেছে।
‘আইএনএস তুষিল’ ১২৫ মিটার দীর্ঘ, ৩,৯০০ টন স্থানচ্যুতি ক্ষমতাসম্পন্ন এবং উন্নত প্রযুক্তি সজ্জিত। এর প্রায় ২৬ শতাংশ অংশ দেশীয়ভাবে নির্মিত, যেখানে ব্রহ্মোস অ্যারোস্পেস, ভারত ইলেকট্রনিক্স লিমিটেড (বিইএল) এবং নোভা ইন্টিগ্রেটেড সিস্টেমের মতো ভারতীয় কোম্পানিগুলোর উল্লেখযোগ্য অবদান রয়েছে।
স্টিলথ প্রযুক্তি সজ্জিত এ ফ্রিগেট রাডার চিহ্ন কমিয়ে হুমকিপূর্ণ পরিবেশে কার্যক্ষমতা বাড়ায়। এর মাল্টি-রোল ক্ষমতার মধ্যে রয়েছে এয়ার, সারফেস এবং সাবমেরিন যুদ্ধ। উন্নত স্থিতিশীলতা এবং আধুনিক অস্ত্রাগারসহ, এটি নৌবাহিনীর পশ্চিম ফ্লিটে একটি শক্তিশালী সংযোজন।
নৌবাহিনী বর্তমানে ৫০টিরও বেশি জাহাজ ও সাবমেরিন নির্মাণ প্রকল্প চালাচ্ছে, যার বেশিরভাগ দেশীয়। এর মধ্যে রয়েছে কোচিন শিপইয়ার্ড লিমিটেডে নির্মিত স্বদেশি এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার, কলকাতা-শ্রেণির ডেস্ট্রয়ার এবং মুম্বাইয়ের মাজাগাঁও ডকে নির্মিত শিবালিক-শ্রেণির ফ্রিগেট।
এছাড়াও, নৌবাহিনী বেসরকারি শিপইয়ার্ডগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করে যুদ্ধজাহাজ নির্মাণে নতুন দিক উন্মোচন করছে। পিপাভাভ শিপইয়ার্ড এবং এবিজি শিপইয়ার্ডের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো নৌবাহিনীর অফশোর পেট্রল ভেসেল এবং ক্যাডেট প্রশিক্ষণ জাহাজ নির্মাণের কাজ করছে।
‘আইএনএস তুষিল’ ভারত ও রাশিয়ার দীর্ঘদিনের প্রতিরক্ষা সহযোগিতার প্রমাণ। ক্রিভাক-৩ সিরিজের ফ্রিগেট হলো এই অংশীদারিত্বের ফসল। ভারতীয় নৌবাহিনীর অস্ত্রাগারে ইতোমধ্যে তালওয়ার-শ্রেণি এবং তেগ-শ্রেণির ছয়টি ফ্রিগেট রয়েছে।
‘আইএনএস তুষিল’ শুধু নৌবাহিনীর শক্তি বাড়িয়েই থেমে থাকে না, বরং এটি ভারতের বৃহত্তর বৈশ্বিক সামুদ্রিক শক্তি হয়ে ওঠার লক্ষ্যের প্রতীক। ভারতীয় নৌবাহিনী আধুনিকীকরণ প্রচেষ্টার মাধ্যমে সামুদ্রিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং বিশ্বে নিজের অবস্থান মজবুত করতে বদ্ধপরিকর।
‘আইএনএস তুষিল’ কমিশনিং শুধু ভারতীয় নৌবাহিনীর অপারেশনাল ক্ষমতা বাড়াবে না, বরং এটি ভারতীয় নৌবাহিনীর আধুনিকীকরণে দৃঢ় প্রতিশ্রুতি এবং সমুদ্রসীমা রক্ষার অঙ্গীকারের প্রতীক।। সূত্র: ইন্ডিয়া নিউজ নেটওয়ার্ক।