দুই দেশের হাজারো বছরের চিরায়ত ঐতিহাসিক ও আধ্যাত্মিক সম্পর্ককে তুলে ধরল লুম্বিনির ভারত-নেপাল সাংস্কৃতিক উৎসব
লুম্বিনি, যা বুদ্ধের পবিত্র জন্মস্থান হিসেবে পরিচিত, গত রোববার (৮ ডিসেম্বর, ২০২৪) দ্বিতীয় ভারত-নেপাল সাংস্কৃতিক উৎসবের আয়োজন করেছিল। এই উৎসব ভারত ও নেপালের সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে উদযাপন করল, বিশেষ করে তাদের বৌদ্ধ ধর্মীয় ঐতিহ্যকে। নেপালে ভারতীয় দূতাবাস ও লুম্বিনি ডেভেলপমেন্ট ট্রাস্টের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এই উৎসব দুই দেশের ঐতিহাসিক ও আধ্যাত্মিক সম্পর্ককে আরও সুদৃঢ় করার লক্ষ্যে কাজ করে।
উৎসবের উদ্বোধন করেন লুম্বিনি প্রদেশের গভর্নর কৃষ্ণ বাহাদুর ঘর্তি মাগর, লুম্বিনি প্রদেশের শিল্প, পর্যটন ও পরিবহন মন্ত্রী প্রচণ্ড বিক্রম ন্যুপানে, সমাজ উন্নয়ন মন্ত্রী জনমজয় তিমিলসিনা, লুম্বিনি ডেভেলপমেন্ট ট্রাস্টের ভাইস চেয়ারম্যান ড. লারকিয়াল লামা এবং কাঠমান্ডুতে ভারতীয় দূতাবাসের উপমিশন প্রধান প্রসন্ন শ্রীবাস্তব।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা, প্রাক্তন সংসদ সদস্যরা, শীর্ষ সন্ন্যাসী, স্থানীয় নেতা এবং বুটওয়ালের মেয়র ও রূপান্দেহি জেলার কর্মকর্তারা।
উৎসবের প্রধান আকর্ষণ ছিল সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। ভারতীয় এবং নেপালি শিল্পীদের অংশগ্রহণে পরিবেশিত হয় মনোমুগ্ধকর নৃত্য। ভারতীয় কাউন্সিল ফর কালচারাল রিলেশন্স (আইসিসিআর)-এর সহযোগিতায় শিখা শর্মা ও তার দলের আটজন সদস্য বৌদ্ধ থিমে একটি অপূর্ব কথক নৃত্য পরিবেশন করেন। নেপালের ঐতিহ্যবাহী নৃত্য পরিবেশন করেন স্বজন রঘুবংশী ও তার দল, যা নেপালের বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতিকে তুলে ধরে।
এর আগে লুম্বিনি বৌদ্ধ বিশ্ববিদ্যালয়ে “ভারত ও নেপালের বৌদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য” শীর্ষক একাডেমিক সেমিনারের আয়োজন করা হয়। দুই দেশের পণ্ডিতরা বৌদ্ধ ঐতিহ্যের ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক তাৎপর্য নিয়ে আলোচনা করেন।
লুম্বিনি, যা ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট এবং বৌদ্ধধর্মের অন্যতম চারটি পবিত্র তীর্থস্থান, বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধ ধর্মানুসারীদের জন্য গভীর তাৎপর্য বহন করে। বৌদ্ধ শাস্ত্র অনুযায়ী, খ্রিস্টপূর্ব ৬২৪ সালে মায়াদেবী এখানে সিদ্ধার্থ গৌতমকে জন্ম দেন, যিনি পরবর্তীতে জ্ঞান লাভ করে শাক্যমুনি বুদ্ধ হন।
উদ্বোধনী বক্তৃতায় কৃষ্ণ বাহাদুর ঘর্তি মাগর সাংস্কৃতিক উৎসবের মাধ্যমে মানুষের মাঝে সম্পর্ক দৃঢ় করার গুরুত্ব তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “লুম্বিনি কেবল একটি আধ্যাত্মিক স্থান নয়, এটি ভারত ও নেপালের মানুষের হৃদয়কে সংযুক্ত করে।” প্রচণ্ড বিক্রম ন্যুপানে পর্যটন ও সাংস্কৃতিক বিনিময় বাড়ানোর ক্ষেত্রে এই উৎসবের ভূমিকা সম্পর্কে জোর দেন।
ভারতীয় দূতাবাসের উপমিশন প্রধান প্রসন্ন শ্রীবাস্তব বলেন, “এমন আয়োজন দুই দেশের গভীর সম্পর্ক উদযাপন করে এবং আমাদের ঐক্যের মূল্যবোধকে তুলে ধরে।”
ভারত-নেপাল সাংস্কৃতিক উৎসব পর্যটন এবং সাংস্কৃতিক সংরক্ষণে সহযোগিতার নতুন সম্ভাবনা উন্মোচনের প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করে। এতে দুই দেশের শিল্পী, পণ্ডিত ও নেতারা একত্রিত হয়ে যৌথ বৌদ্ধ ঐতিহ্যকে কাজে লাগিয়ে পর্যটন ও সাংস্কৃতিক সচেতনতা বাড়ানোর উপায় নিয়ে আলোচনা করেন।
উৎসবের মাধ্যমে লুম্বিনিকে একটি বৈশ্বিক বৌদ্ধ তীর্থস্থান হিসেবে প্রচারের সম্ভাবনা তুলে ধরা হয়। আন্তর্জাতিকভাবে এই স্থানকে প্রসারিত করার প্রচেষ্টা বৈশ্বিক বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের জন্য এর গুরুত্ব আরও বাড়াবে।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির লুম্বিনি সফর, বিশেষ করে ২৫৬৬তম বুদ্ধ পূর্ণিমা উদযাপনে অংশগ্রহণ, এই পবিত্র স্থানটির গুরুত্ব আরও বাড়িয়েছে। ভারত-নেপাল সাংস্কৃতিক উৎসব শুধু দুই দেশের ঐতিহ্য উদযাপন করেই থেমে থাকেনি, বরং বুদ্ধের শিক্ষা শান্তি ও ঐক্যের প্রচারে কীভাবে যুগোপযোগী তা তুলে ধরেছে।
উৎসবের মাধ্যমে ভারত ও নেপালের মধ্যে সাংস্কৃতিক বিনিময় এবং যৌথ ঐতিহ্যের উপর ভিত্তি করে সম্পর্ক আরও মজবুত করার পথ প্রসারিত হয়েছে। এটি দুই দেশের ঐতিহ্যিক বন্ধনের একটি সমৃদ্ধ উদাহরণ হিসেবে কাজ করবে। সূত্র: ইন্ডিয়া নিউজ নেটওয়ার্ক।