ভারতে উদ্ভাবন ও প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে বিদেশীদের জন্য কৌশলগত সুবিধা রয়েছে বলে মন্তব্য করেন শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গয়াল।
মুম্বাইয়ে ২০২৪ সালের ৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত ভারত-নরওয়ে বিজনেস ফোরাম দুই দেশের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্পর্ক আরও গভীর করার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। কনফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান ইন্ডাস্ট্রি (সিআইআই) এবং ডিপার্টমেন্ট ফর প্রমোশন অফ ইন্ডাস্ট্রি অ্যান্ড ইন্টারনাল ট্রেড (ডিপিআইআইটি)-এর যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে নীতিনির্ধারকশিল্প নেতৃবৃন্দ এবং সংশ্লিষ্ট পক্ষদের অংশগ্রহণ ছিল। মূল আলোচনার বিষয় ছিল সমুদ্র পরিবহননবায়নযোগ্য জ্বালানিএবং স্থায়িত্বসহ বিভিন্ন খাতে অংশীদারিত্ব শক্তিশালী করা।
স্টার্টআপ ব্রিজের সূচনা
কেন্দ্রীয় বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রী পীযূষ গয়াল খোলা আলোচনাসভা পরিচালনা করেনযেখানে তিনি নিয়ন্ত্রণমূলক চ্যালেঞ্জপাবলিক প্রকিউরমেন্ট প্রক্রিয়া এবং গুণগত মানের সাথে সম্পর্কিত বিষয়গুলো তুলে ধরেন। তিনি ভারত ও নরওয়ের মধ্যে একটি “স্টার্টআপ ব্রিজ” চালুর প্রস্তাব দেনযা উদ্যোক্তাদের উদ্ভাবন এবং সহযোগিতা উৎসাহিত করবে। এই উদ্যোগটি ২০২৫ সালে অনুষ্ঠিতব্য ইন্দো-নর্ডিক শীর্ষ সম্মেলনে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করার পরিকল্পনা করা হয়েছে
এই ব্রিজ হবে দুই দেশের স্টার্টআপগুলোর জন্য ধারণাপ্রযুক্তি এবং সম্পদ ভাগ করে নেওয়ার একটি অনুঘটক,” বলেন গয়াল। তিনি শক্তিখাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণলজিস্টিকস এবং বৃত্তাকার অর্থনীতির মতো খাতগুলোতে যৌথ প্রচেষ্টার মাধ্যমে প্রবৃদ্ধির সুযোগ উন্মোচনের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন
সম্প্রতি স্বাক্ষরিত ট্রেড অ্যান্ড ইকোনমিক পার্টনারশিপ এগ্রিমেন্ট (টিইপিএ)-এর প্রশংসা করেন ফোরামের অংশগ্রহণকারীরা। নরওয়ে ইউরোপীয় মুক্ত বাণিজ্য সংস্থার (ইএফটিএ) গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। টিইপিএ চুক্তি বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্পর্ককে উল্লেখযোগ্যভাবে শক্তিশালী করার কথা বলা হয়েছে
নরওয়ের বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রী সেসিলি মাইরসেথ একটি ভিডিও বার্তায় বলেন, “এই চুক্তি নরওয়ের ব্যবসার জন্য ভারতের গতিশীল অর্থনীতিতে উন্নতির বিশাল সম্ভাবনা তৈরি করবে।”
নরওয়ের রাষ্ট্রদূত মায়-এলিন স্টেনার নবায়নযোগ্য জ্বালানিসমুদ্র পরিবহনএবং জলবায়ু সমাধানের মতো খাতগুলোতে চুক্তির গুরুত্ব তুলে ধরেন। তিনি জানাননরওয়ে ২০২৫ সালের মধ্যে টিইপিএ অনুমোদনের পরিকল্পনা করছে এবং ইন্দো-নর্ডিক শীর্ষ সম্মেলনের মাধ্যমে সম্পর্ক আরও গভীর করার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে
মন্ত্রী গয়াল ভারতকে একটি শক্তিশালী বিনিয়োগ গন্তব্য হিসেবে চিহ্নিত করে বলেন, “ভারতের কৌশলগত সুবিধা এটিকে উদ্ভাবন এবং প্রবৃদ্ধির একটি বৈশ্বিক কেন্দ্র হিসাবে গড়ে তুলেছে। নরওয়ের কোম্পানিগুলো ভারতে ব্যবসা করার পাশাপাশি বৈশ্বিক বাজারে প্রবেশের একটি মঞ্চ হিসেবে এটি ব্যবহার করতে পারে।”
ইনোভেশন নরওয়ের উপস্থাপিত বিজনেস ক্লাইমেট সার্ভে দেখায় যেভারতীয় বাজারে নরওয়ের কোম্পানিগুলোর আস্থা ক্রমশ বাড়ছে। অনেকে তাদের কার্যক্রম সম্প্রসারণের ইচ্ছা প্রকাশ করেছেযা সরকারের নীতি এবং অবকাঠামোগত উন্নতির কারণে উৎসাহিত হয়েছে
ডিপিআইআইটি-এর যুগ্ম সচিব গুরনীত তেজ বলেনভারত-নরওয়ে বাণিজ্যের স্থিতিশীল প্রবৃদ্ধি ইতিমধ্যে ১.১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছুঁয়েছে। তিনি নীল অর্থনীতিসবুজ হাইড্রোজেনমৎস্য এবং জল ব্যবস্থাপনার মতো খাতে সহযোগিতার উল্লেখ করেন
স্টেনার টেকসই উন্নয়ন এবং জলবায়ু-কেন্দ্রিক শিল্পকে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার মূল ক্ষেত্র হিসেবে চিহ্নিত করেন
গঠনমূলক শিল্প সংলাপ
ফোরামে ভারত এবং নরওয়ের শিল্পের মধ্যে গঠনমূলক সংলাপ হয়েছেযেখানে সমুদ্র পরিবহননবায়নযোগ্য জ্বালানি এবং লজিস্টিকস খাতে বিনিয়োগ বাড়ানোর উপায় নিয়ে আলোচনা হয়
ভারত-নরওয়ে বিজনেস ফোরাম একটি গতিশীল এবং সামনের দিকে নজর দেওয়া অংশীদারিত্বের জন্য দুই দেশের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে। ২০২৫ সালের ইন্দো-নর্ডিক শীর্ষ সম্মেলন পর্যন্ত এই উদ্যোগগুলো অর্থনৈতিক সম্পর্ক রূপান্তরে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে সূত্র: ইন্ডিয়া নিউজ নেটওয়ার্ক।