আধুনিক কূটনীতি শুরু হওয়ার আগেই দুই দেশের মধ্যে সাংস্কৃতিক এবং বাণিজ্যিক বিনিময় বিকশিত হয়েছে
ভারত ও মিশর ২০২৪ সালের ৫ ডিসেম্বর নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত ১৩তম পররাষ্ট্র দপ্তর পরামর্শ-এর সময় তাদের দৃঢ় দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক পুনর্ব্যক্ত করেছে। এই বৈঠকে ভারতের পক্ষে সভাপতিত্ব করেন অরুণ কুমার চট্টোপাধ্যায়, সেক্রেটারি (কনসুলার, পাসপোর্ট, ভিসা ও প্রবাসী ভারতীয় বিষয়ক বিভাগ), এবং মিশরের পক্ষে সভাপতিত্ব করেন রাষ্ট্রদূত আহমেদ শাহিন, এশিয়ান বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এই বৈঠক দুই দেশের ক্রমবর্ধমান কৌশলগত অংশীদারিত্বের গভীরতা এবং বিস্তৃতির প্রতিফলন।
বৈঠকের প্রধান বিষয়বস্তু
বৈঠকে উভয় দেশ তাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের সম্পূর্ণ পরিসর পর্যালোচনা করে এবং রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সামাজিক-সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়ানোর গুরুত্ব তুলে ধরে। তারা আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় একত্রে কাজ করার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে।
ভারত ও মিশরের সম্পর্ক ঐতিহাসিক এবং সভ্যতার ভিত্তিতে গভীরভাবে প্রোথিত। আধুনিক কূটনীতি শুরু হওয়ার আগেই এই সম্পর্ক বিকশিত হয়েছে। সাম্প্রতিক কয়েক দশকে, এই সম্পর্ক পরস্পরের প্রতি সম্মান এবং অভিন্ন লক্ষ্য দ্বারা পরিচালিত একটি বিস্তৃত অংশীদারিত্বে রূপ নিয়েছে।
রাজনৈতিক সহযোগিতা
বৈঠকে উভয় পক্ষ কূটনৈতিক যোগাযোগ বাড়ানো এবং আন্তর্জাতিক ফোরামে বহুপাক্ষিকতার প্রতি সমর্থন জোরদারের উপায় নিয়ে আলোচনা করে। ভারত ও মিশর জি২০, ব্রিকস এবং “ভয়েস অফ গ্লোবাল সাউথ”-এর মতো ফোরামে সক্রিয় অংশগ্রহণকারী, যেখানে তারা উন্নয়নশীল দেশের স্বার্থ রক্ষায় একত্রে কাজ করছে। আঞ্চলিক শান্তি, স্থিতিশীলতা এবং সমৃদ্ধির জন্য তাদের অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি এই প্রচেষ্টাকে চালিত করে।
অর্থনৈতিক সহযোগিতা
অর্থনৈতিক সহযোগিতা বৈঠকের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল। উভয় দেশ বাণিজ্য, বিনিয়োগ এবং প্রযুক্তিগত সহযোগিতা বাড়ানোর উপায় নিয়ে আলোচনা করে। মিশরে ভারতের প্রায় ৫৫টি কোম্পানি ৩.৭৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করেছে, যা নবায়নযোগ্য জ্বালানি, কৃষি এবং সবুজ হাইড্রোজেনসহ বিভিন্ন খাতে বিস্তৃত। এই উদ্যোগগুলো শুধু অর্থনৈতিক সম্পর্কই নয়, বরং মিশরে কর্মসংস্থান এবং খাদ্য নিরাপত্তা বাড়াতেও সহায়ক।
সাংস্কৃতিক ও শিক্ষামূলক বিনিময়
সাংস্কৃতিক ও শিক্ষামূলক বিনিময় ভারত-মিশর সম্পর্কের একটি প্রধান ভিত্তি। আন্তর্জাতিক যোগ দিবস এবং সাংস্কৃতিক উৎসবের মতো উদ্যোগ জনগণের মধ্যে সংযোগকে গভীরতর করেছে। মিশরে ভারতীয় খাবার, বলিউড এবং কাবাডি খেলাধুলার জনপ্রিয়তা এই সাংস্কৃতিক সাদৃশ্যের উদাহরণ। “ভারত-মিশর মৈত্রী কাবাডি টুর্নামেন্ট” এর মতো ইভেন্ট উভয় দেশের জনগণের মধ্যে আরও বেশি যোগাযোগ এবং বোঝাপড়ার সুযোগ করে দিয়েছে।
প্রতিরক্ষা সহযোগিতা
উভয় দেশ প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে সম্পর্ক জোরদার করার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ নিয়েছে। যৌথ সামরিক মহড়া, কৌশলগত আলোচনা এবং প্রযুক্তিগত সহযোগিতা এই প্রচেষ্টাকে এগিয়ে নিয়েছে। ভারত এবং মিশরের রাফালে যুদ্ধবিমানগুলো এই বছর পিরামিডের উপর একসঙ্গে উড়ে তাদের ক্রমবর্ধমান কৌশলগত সংযোগের একটি শক্তিশালী প্রতীক তৈরি করেছে।
আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক ইস্যু
বৈঠকে জলবায়ু পরিবর্তন, জ্বালানি নিরাপত্তা এবং টেকসই উন্নয়নসহ বিভিন্ন আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ নিয়ে আলোচনা করা হয়।
উচ্চপর্যায়ের সফর ও ভবিষ্যতের দৃষ্টিভঙ্গি
সম্প্রতি মিশরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসির ৭৪তম প্রজাতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিতি এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মিশর সফর দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের নতুন মাত্রা সংযোজন করেছে। ভারত-মিশর অংশীদারিত্বের সম্ভাবনা বিপুল। স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা এবং কর্মসংস্থানের মতো অভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় তারা পরস্পরের শক্তি কাজে লাগিয়ে অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি এবং টেকসই উন্নয়নের পথ সুগম করতে পারে। সূত্র: ইন্ডিয়া নিউজ নেটওয়ার্ক।