ভারত নিজেদের ‘প্রতিবেশী প্রথম’ নীতির আলোকে শ্রীলঙ্কার জনগণমুখী ডিজিটালাইজেশনে সহায়তা করবে।
ভারত শ্রীলঙ্কায় ডিজিটাল পাবলিক অবকাঠামো (ডিপিআই) সম্পূর্ণ বাস্তবায়নে সহায়তা করবে। দুই দেশই জনগণের সুবিধার্থে ডিজিটাল আর্থিক লেনদেনকে উৎসাহিত করতে ইউপিআই ডিজিটাল পেমেন্ট ব্যবস্থার ব্যবহার সম্প্রসারণে সম্মত হয়েছে। সোমবার (১৬ ডিসেম্বর, ২০২৪) নয়াদিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং সফররত শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট অনুরা কুমার দিশানায়েকের মধ্যে বৈঠকের পর এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

শ্রীলঙ্কার ডিজিটালাইজেশন প্রচেষ্টায় ভারতের পূর্ণ সহযোগিতা
বৈঠকের সময় প্রেসিডেন্ট দিশানায়েকে জনগণমুখী ডিজিটালাইজেশনে ভারতের সফল অভিজ্ঞতার প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, এর মাধ্যমে শাসন ব্যবস্থার উন্নতি, সেবাদানের রূপান্তর, স্বচ্ছতা নিশ্চিতকরণ এবং সামাজিক কল্যাণে অবদান রাখা সম্ভব হয়েছে। তিনি শ্রীলঙ্কায় ভারতীয় সহায়তায় অনুরূপ ব্যবস্থা গড়ে তোলার আগ্রহ প্রকাশ করেন। যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, “প্রধানমন্ত্রী মোদি শ্রীলঙ্কার এই প্রচেষ্টায় ভারতের পূর্ণ সহযোগিতা দেওয়ার প্রস্তুতি ব্যক্ত করেছেন।”
 এ পরিপ্রেক্ষিতে, দুই নেতা নিম্নলিখিত বিষয়ে সম্মত হন:
১. শ্রীলঙ্কার ইউনিক ডিজিটাল আইডেন্টিটি প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়ন করা, যা জনগণকে সরকারি পরিষেবা পৌঁছে দেওয়ার প্রচেষ্টায় সহায়তা করবে।
২. ভারতের সহায়তায় শ্রীলঙ্কায় ডিজিটাল পাবলিক অবকাঠামোর (ডিপিআই) পূর্ণ বাস্তবায়নে সহযোগিতা করা।
৩. ভারতে প্রতিষ্ঠিত অভিজ্ঞতা ও ব্যবস্থার ভিত্তিতে শ্রীলঙ্কায় ডিপিআই স্ট্যাক বাস্তবায়নের সম্ভাবনা খতিয়ে দেখতে একটি যৌথ কার্যকরী দল গঠন করা। এর মধ্যে শ্রীলঙ্কায় ডিজিলকার চালুর বিষয়ে চলমান প্রযুক্তিগত আলোচনাকে এগিয়ে নেওয়া।
৪. উভয় দেশের জনগণের সুবিধার্থে এবং উভয় দেশের নিয়ন্ত্রক নির্দেশিকার আলোকে ইউপিআই ডিজিটাল পেমেন্ট ব্যবস্থার সম্প্রসারণের মাধ্যমে ডিজিটাল আর্থিক লেনদেনকে উৎসাহিত করা। (উল্লেখ্য, ভারত ইতোমধ্যে ফেব্রুয়ারি ২০২৪ থেকে শ্রীলঙ্কায় ভারতীয় পর্যটকদের জন্য ইউপিআই চালু করেছে)।
৫. ভারতের আধার প্ল্যাটফর্ম, পোর্টাল, পিএম গতি শক্তি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম, কাস্টমস ও অন্যান্য কর পদ্ধতির ডিজিটালাইজেশন নিয়ে শ্রীলঙ্কাকে অভিজ্ঞতা বিনিময় অব্যাহত রাখা, যাতে সমতুল্য ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনা মূল্যায়ন করা যায়।

ভারতীয় ব্যবসায়ীদের শ্রীলঙ্কায় বিনিয়োগের আহ্বান
নয়াদিল্লিতে প্রেসিডেন্ট দিশানায়েকে ভারত-শ্রীলঙ্কা বিজনেস ফোরামে বক্তৃতা করেন, যেখানে তথ্যপ্রযুক্তি, স্টার্টআপ, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, কৃষি ও বস্ত্র খাতের ভারতীয় সিইওরা অংশ নেন। তিনি শ্রীলঙ্কার বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তুলে ধরে ভারতীয় ব্যবসায়ীদের পর্যটন, তথ্যপ্রযুক্তি ও নবায়নযোগ্য জ্বালানির মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতে বিনিয়োগের আহ্বান জানান।

তিনি সামাজিক মাধ্যম এক্স-এ লেখেন, “আজ (১৬) নয়াদিল্লিতে ভারতীয় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ফলপ্রসূ আলোচনা করেছি। শ্রীলঙ্কার বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তুলে ধরে তাদের পর্যটন, তথ্যপ্রযুক্তি ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছি। ভারত ও শ্রীলঙ্কা একসাথে অর্থনৈতিক সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করতে পারে!”

ভারতের বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রী পীযূষ গোয়েল ঐ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন এবং ভারত-শ্রীলঙ্কার ঐতিহাসিক ও দৃঢ় অর্থনৈতিক সম্পর্কের কথা উল্লেখ করেন। তিনি দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় করতে ভারতের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন।

তিনি এক্স-এ লেখেন, “শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট অনুরা দিশানায়েকের সঙ্গে ভারত-শ্রীলঙ্কা বিজনেস ফোরামে বক্তব্য রাখতে পেরে আনন্দিত। ঐতিহাসিক ও শক্তিশালী অর্থনৈতিক সম্পর্ক তুলে ধরে সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক বিনিময়ের মাধ্যমে যৌথ সমৃদ্ধির প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছি।”

উল্লেখযোগ্যভাবে, মোদি-দিশানায়েক বৈঠকে শ্রীলঙ্কার রপ্তানি সম্ভাবনা বাড়াতে মূল খাতগুলোতে বিনিয়োগ উৎসাহিত করতে এবং অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত সহযোগিতা চুক্তি নিয়ে আলোচনা অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত হয়। ইন্ডিয়ান রুপি-লঙ্কান রুপি বাণিজ্য নিষ্পত্তি সম্প্রসারণের দিকেও গুরুত্ব দেওয়া হয়।

ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিস্রি বলেন, “প্রধানমন্ত্রী মোদি প্রেসিডেন্ট দিশানায়েকে আশ্বস্ত করেছেন যে ভারতের সহযোগিতা বিনিয়োগভিত্তিক ও অনুদাননির্ভর হবে, যাতে শ্রীলঙ্কার ঋণের বোঝা হ্রাস পায় এবং দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক সুযোগ সৃষ্টি হয়।”

ভারত ও শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্টদের মধ্যে সম্পর্ক দৃঢ়করণের আলোচনা
এছাড়া, রাষ্ট্রপতি দিশানায়েকে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তারা আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও পারস্পরিক সহযোগিতার বিষয়ে আলোচনা করেন।

রাষ্ট্রপতি ভবনের বিবৃতিতে বলা হয়, “রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট অনুরা কুমার দিশানায়েককে রাষ্ট্রপতি ভবনে স্বাগত জানান। তিনি বলেন, ভারত শ্রীলঙ্কার টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রচেষ্টায় সবসময় পাশে থাকবে।”

দিশানায়েকে এক্স-এ লেখেন, “আজ (১৬) রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর সঙ্গে ফলপ্রসূ বৈঠক করেছি। দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্ক জোরদার, আঞ্চলিক নিরাপত্তা এবং পারস্পরিক সহযোগিতার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। উষ্ণ আতিথেয়তা ও নৈশভোজের জন্য কৃতজ্ঞ।”

মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) তিনি নয়াদিল্লির এআইআইএমএস-এর জন ঔষধি কেন্দ্র পরিদর্শন করেন। পরে তিনি বোদ্ধ গয়া যান এবং মহাবোধি মন্দিরে পূজা ও প্রার্থনা করেন। দিশানায়েকে এক্স-এ লেখেন, “আজ সকালে (১৭) বোদ্ধ গয়া পরিদর্শন করেছি, যেখানে সিদ্ধার্থ গৌতম বুদ্ধত্ব লাভ করেছিলেন। মহাবোধি মন্দির এবং শ্রী মহা বোধি বৃক্ষের কাছে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছি।” সূত্র: ইন্ডিয়া নিউজ নেটওয়ার্ক।