ভারত ও মলদোভার বন্ধুত্ব দৃঢ় করতে নয়াদিল্লিতে মলদোভার দূতাবাসের উদ্বোধন একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক।
ভারত এবং মলদোভার কূটনৈতিক সম্পর্কে নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়েছে। রোববার (১৫ ডিসেম্বর, ২০২৪) আনুষ্ঠানিকভাবে ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে মলদোভার দূতাবাস উদ্বোধন করা হয়েছে। এই ঐতিহাসিক অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রী এস জয়শঙ্কর এবং মলদোভার উপ-প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী মিহাই পপশোই।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে এস জয়শঙ্কর মলদোভার দূতাবাস প্রতিষ্ঠাকে “দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের এক গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি” হিসেবে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, “১৯৯২ সালে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের পর থেকে আমাদের দুই দেশের মধ্যে যে অঙ্গীকার, এটি তারই প্রতিফলন।” তিনি আরও উল্লেখ করেন, বাণিজ্য, শিক্ষা, প্রযুক্তি এবং সাংস্কৃতিক বিনিময় সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে দুই দেশের সম্পর্ক ক্রমাগত গভীর হচ্ছে।

“অপারেশন গঙ্গা”-য় মলদোভার সহায়তার স্বীকৃতি
জয়শঙ্কর বিশেষভাবে স্মরণ করেন ইউক্রেন সংকটের সময় “অপারেশন গঙ্গা”র মাধ্যমে ভারতীয় শিক্ষার্থীদের সরিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে মলদোভার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। তিনি বলেন, “মলদোভার এই সহায়তা ভারত কখনো ভুলবে না।” এই ধরনের সহযোগিতা দুই দেশের মধ্যে বিশ্বাস ও বন্ধুত্বকে আরও দৃঢ় করেছে।

কূটনৈতিক সম্পর্ক আরও দৃঢ়করণ
নয়াদিল্লিতে মলদোভার দূতাবাস চালুর মাধ্যমে কূটনৈতিক সম্পর্ক আরও শক্তিশালী করার লক্ষ্যে দুই দেশের নেতারা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এস জয়শঙ্কর মলদোভার ভূমিকাকে ইউরোপে ভারতের উন্নয়ন অংশীদার হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, “মলদোভার রাজধানী কিশিনেভে একটি ভারতীয় দূতাবাস প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এই অংশীদারিত্ব আরও শক্তিশালী হবে।”

দুই দেশের সাংস্কৃতিক সংযোগও অনুষ্ঠানে গুরুত্ব পেয়েছে। জয়শঙ্কর বলেন, মলদোভায় ভারতের যোগব্যায়াম এবং হিন্দি ভাষার জনপ্রিয়তা দুই দেশের জনগণের মধ্যে গভীর সম্পর্কের পরিচায়ক। বর্তমানে মলদোভায় অধ্যয়নরত ২,০০০-এরও বেশি ভারতীয় শিক্ষার্থী দুই দেশের মধ্যে সাংস্কৃতিক সেতুবন্ধন তৈরিতে ভূমিকা রাখছে।

তিনি বলেন, “ভারতীয় শিক্ষার্থীদের জন্য মলদোভার উষ্ণ অভ্যর্থনা দুই দেশের পারস্পরিক আস্থা ও শ্রদ্ধার প্রতিফলন।” শিক্ষার্থী বিনিময় ও একাডেমিক সহযোগিতা বৃদ্ধির উপর তিনি জোর দেন।

জলবায়ু পরিবর্তন ও টেকসই উন্নয়নে একযোগে কাজ
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দুই নেতা বৈশ্বিক সমস্যাগুলোর উপর আলোচনার মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা, টেকসই উন্নয়ন এবং বহুপাক্ষিক সহযোগিতার গুরুত্ব পুনর্ব্যক্ত করেন। আন্তর্জাতিক মঞ্চে একত্রে কাজ করার মাধ্যমে এই সমস্যাগুলোর সমাধান করার অঙ্গীকার করেন তারা।

জয়শঙ্কর মলদোভার বৈশ্বিক আলোচনায় সক্রিয় ভূমিকার প্রশংসা করেন এবং ভারত ও মলদোভার শান্তিপূর্ণ ও টেকসই ভবিষ্যতের লক্ষ্যে একযোগে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দেন।

দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার নতুন অধ্যায়
অনুষ্ঠানে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুশমা স্বরাজ ইনস্টিটিউট অফ ফরেন সার্ভিস এবং মলদোভার ডিপ্লোম্যাটিক ইনস্টিটিউটের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। এটি দুই দেশের কূটনীতিকদের প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে সহযোগিতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে। এছাড়া, মলদোভা আন্তর্জাতিক সৌর জোটে যোগ দেওয়ার জন্য একটি ফ্রেমওয়ার্ক চুক্তি স্বাক্ষর করেছে।

ব্যবসা-বাণিজ্যে সহযোগিতা
মলদোভার উপ-প্রধানমন্ত্রী মিহাই পপশোই নয়াদিল্লিতে কনফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ান ইন্ডাস্ট্রি (সিআইআই) আয়োজিত একটি ব্যবসায়িক রাউন্ডটেবিলে অংশগ্রহণ করেন। তিনি ভারতের সঙ্গে ফার্মাসিউটিক্যালস, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, এবং প্রযুক্তি খাতে বিনিয়োগের সম্ভাবনা তুলে ধরেন। পপশোই বলেন, “মলদোভা টেকসই শক্তি ও উদ্ভাবনী প্রযুক্তির ক্ষেত্রে ভারতের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়িক অংশীদার হতে পারে।”

ভবিষ্যতের পথচলা
দূতাবাস উদ্বোধনের মাধ্যমে ভারত ও মলদোভার সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় হলো। বাণিজ্য, শিক্ষা, সংস্কৃতি এবং প্রযুক্তি খাতে সহযোগিতা বৃদ্ধি করে দুই দেশ একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যতের লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছে। এস জয়শঙ্কর অনুষ্ঠানের শেষে মলদোভার সরকার ও জনগণকে অভিনন্দন জানান। তিনি বলেন, “এই দূতাবাস আমাদের বন্ধুত্বের মাইলফলক হয়ে থাকবে। আমরা একসঙ্গে একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যত গড়ব।” সূত্র: ইন্ডিয়া নিউজ নেটওয়ার্ক।