পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষামন্ত্রীদের এই যৌথ আলোচনার মূল বিষয় ছিল ভারত-যুক্তরাজ্য রোডম্যাপ ২০৩০-এর অগ্রগতি।
ভারত এবং যুক্তরাজ্য সোমবার (৩ ডিসেম্বর, ২০২৪) নয়াদিল্লিতে দ্বিতীয় ২+২ পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা সংলাপ আয়োজন করেছে। এই উচ্চপর্যায়ের সংলাপ উভয় দেশের মধ্যে বিস্তৃত কৌশলগত অংশীদারিত্বকে এগিয়ে নিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে।
ভারতীয় প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের (ইউরোপ পশ্চিম) যুগ্মসচিব পীযূষ শ্রীবাস্তব এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের (আন্তর্জাতিক সহযোগিতা) যুগ্মসচিব বিদ্বেষ নেগি। যুক্তরাজ্যের পক্ষে ছিলেন ফরেন, কমনওয়েলথ ও ডেভেলপমেন্ট অফিসের ইন্ডিয়া ডিরেক্টর বেন মেলর এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের ডিরেক্টর স্ট্র্যাটেজিক প্রোগ্রামস শিমন ফিমা।
সংলাপে উভয় পক্ষ ভারত-যুক্তরাজ্যের বিস্তৃত কৌশলগত অংশীদারিত্বের সবদিক পর্যালোচনা করেন। তারা উচ্চপর্যায়ের সংলাপ অব্যাহত রাখার গুরুত্বের ওপর জোর দেন, যাতে এই গতিশীল অংশীদারিত্ব আরও সমৃদ্ধ হতে পারে। আলোচনার প্রধান বিষয় ছিল ভারত-যুক্তরাজ্য রোডম্যাপ ২০৩০-এর অগ্রগতি, যা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে শক্তিশালী করার একটি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা।
দুই পক্ষই রোডম্যাপটিকে পুনরুজ্জীবিত করার প্রয়োজনীয়তা এবং উদীয়মান চ্যালেঞ্জ ও সুযোগ মোকাবিলায় নতুন সহযোগিতার ক্ষেত্র চিহ্নিত করার ব্যাপারে একমত হন।
আলোচনার প্রধান বিষয়সমূহ
সংলাপে ভারত-যুক্তরাজ্য সম্পর্কের কৌশলগত এবং বহুমুখী প্রকৃতিকে প্রতিফলিত করে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের ওপর আলোকপাত করা হয়।
অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক
উভয় পক্ষ অর্থনৈতিক সম্পর্ক শক্তিশালী করার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছে। বিশেষ করে, একটি পারস্পরিক সুবিধাজনক মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি দ্রুত সম্পন্ন করার বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হয়। এই চুক্তি উভয় দেশের ব্যবসার জন্য নতুন সুযোগ উন্মুক্ত করবে এবং প্রবৃদ্ধি ও উদ্ভাবনকে ত্বরান্বিত করবে।
প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা সহযোগিতা
সংলাপে প্রতিরক্ষা এবং নিরাপত্তা সম্পর্ক জোরদার করার ওপর জোর দেওয়া হয়। এতে সাইবার নিরাপত্তা, সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলা এবং গুরুত্বপূর্ণ প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি সহযোগিতার মতো বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত ছিল। প্রতিরক্ষা শিল্প রোডম্যাপের অগ্রগতিও পর্যালোচনা করা হয়, যা উত্পাদন এবং উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়ানোর লক্ষ্য রাখে।
গুরুত্বপূর্ণ ও উদীয়মান প্রযুক্তি
উদ্ভাবন ছিল আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যেখানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, কোয়ান্টাম কম্পিউটিং এবং উন্নত উত্পাদন প্রযুক্তিতে সহযোগিতার সুযোগ অন্বেষণ করা হয়। সম্প্রতি চালু হওয়া প্রযুক্তি ও নিরাপত্তা উদ্যোগ এই প্রচেষ্টাগুলোর একটি প্রধান স্তম্ভ।
পরিষ্কার এবং সবুজ জ্বালানি
পরিষ্কার জ্বালানি এবং সবুজ প্রযুক্তিতে সহযোগিতা গভীর করা একটি অভিন্ন অগ্রাধিকার। উভয় দেশ জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় টেকসই পদ্ধতি এবং উদ্ভাবনের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
সাংস্কৃতিক ও জনগণের মধ্যে সংযোগ
সংলাপে সাংস্কৃতিক, শিক্ষামূলক, এবং জনগণের মধ্যে যোগাযোগ বাড়ানোর উপরও গুরুত্ব দেওয়া হয়, যা পারস্পরিক বোঝাপড়া বাড়াতে এবং জনগণকে ঘনিষ্ঠভাবে সংযুক্ত করতে সহায়ক।
উল্লেখযোগ্য উদ্যোগ
সংলাপে বেশ কিছু নতুন উদ্যোগ তুলে ধরা হয়, যা বিভিন্ন ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি প্রদর্শন করে:
প্রযুক্তি ও নিরাপত্তা উদ্যোগ: উন্নত প্রযুক্তি এবং জাতীয় নিরাপত্তায় সহযোগিতার একটি কাঠামো।
যুক্তরাজ্য-ভারত অবকাঠামো অর্থায়ন সেতু: টেকসই এবং স্থিতিশীল অবকাঠামো প্রকল্পে বিনিয়োগ সহজতর করার একটি প্ল্যাটফর্ম।
ইলেকট্রিক প্রপালশন সক্ষমতা অংশীদারিত্ব: প্রতিরক্ষা ও বেসামরিক ক্ষেত্রে উন্নত প্রপালশন প্রযুক্তি নিয়ে একটি প্রোগ্রাম।
আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক প্রসঙ্গ
উভয় পক্ষ সাম্প্রতিক বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক উন্নয়ন নিয়ে মতবিনিময় করেন এবং একটি মুক্ত, সমৃদ্ধ, এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের প্রতি তাদের অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি পুনর্ব্যক্ত করেন।
২+২ সংলাপের প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো
২+২ সংলাপ হলো একটি গুরুত্বপূর্ণ দ্বিপাক্ষিক প্রক্রিয়া, যা পররাষ্ট্রনীতি ও প্রতিরক্ষা লক্ষ্যসমূহকে একীভূত করার উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত। এটি ভারত-যুক্তরাজ্য রোডম্যাপ ২০৩০-এর অংশ হিসেবে গৃহীত হয়। সংলাপটি নিরাপত্তা ও ভূরাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সমন্বিত প্রচেষ্টাকে উৎসাহিত করে।
আগামীর পরিকল্পনা
দ্বিতীয় ২+২ সংলাপের সফল সমাপ্তি ২০২৫ সালে যুক্তরাজ্যে পরবর্তী সংলাপ আয়োজনের পথ প্রশস্ত করেছে। ভারত এবং যুক্তরাজ্য তাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করার সঙ্গে সঙ্গে, এই সংলাপ বৈশ্বিক শান্তি, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি এবং প্রযুক্তিগত অগ্রগতির প্রতি তাদের অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গির প্রতীক। এই অংশীদারিত্ব শুধু দুই দেশের জন্য নয়, বৃহত্তর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জন্যও স্থিতিশীলতা এবং অগ্রগতির ভিত্তি হিসেবে কাজ করে। সূত্র: ইন্ডিয়া নিউজ নেটওয়ার্ক।