এই মহড়াটি সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশন, হাইব্রিড যুদ্ধ এবং সরবরাহ ব্যবস্থার ওপর গুরুত্ব দেয়।
ভারত এবং কাম্বোডিয়ার সেনাবাহিনীর মধ্যে প্রথম যৌথ সামরিক মহড়া সিনব্যাক্স ২০২৪ ১ ডিসেম্বর, ২০২৪ তারিখে পুনের ফরেন ট্রেনিং নোডে শুরু হয়েছে। এই মহড়া উভয় দেশের প্রতিরক্ষা সহযোগিতা ও কার্যকরী সামঞ্জস্য বাড়ানোর একটি বড় পদক্ষেপ। এক সপ্তাহব্যাপী এই টেবিল-টপ মহড়া, যা ৮ ডিসেম্বর শেষ হবে, সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশন, হাইব্রিড যুদ্ধ এবং সরবরাহ ব্যবস্থার ওপর কেন্দ্র করে।
কাম্বোডিয়ার সেনাবাহিনী এবং ভারতীয় সেনাবাহিনীর ইনফ্যান্ট্রি ব্রিগেডের ২০ জন করে সদস্যের অংশগ্রহণে এই মহড়া সামরিক সহযোগিতা শক্তিশালী করা এবং একটি থিমভিত্তিক প্রশিক্ষণ প্রোগ্রামের মাধ্যমে পারস্পরিক বিশ্বাস স্থাপন করার উদ্দেশ্যে পরিচালিত হচ্ছে।
পর্যায়ভিত্তিক প্রশিক্ষণ প্রোগ্রাম
এই মহড়াটি তিনটি পর্যায়ে বিভক্ত, যেখানে প্রতিটি পর্যায় যৌথ সামরিক কার্যক্রমের গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলোকে তুলে ধরে:
প্রথম পর্যায়: প্রস্তুতি ও ওরিয়েন্টেশন
এই পর্যায়ে সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানের মৌলিক ধারণা এবং জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে কার্যক্রমের কাঠামো সম্পর্কে অংশগ্রহণকারীদের অবহিত করা হয়। জাতিসংঘ সনদের ৭ম অধ্যায়ের অধীনে সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলে শান্তি স্থাপনের কৌশল শেখানো হয়।
দ্বিতীয় পর্যায়: টেবিল-টপ মহড়া
এই পর্যায়ে পরিস্থিতি-ভিত্তিক আলোচনা এবং গোয়েন্দা তথ্য, নজরদারি, ও অনুসন্ধান কার্যক্রমের জন্য একটি যৌথ প্রশিক্ষণ টাস্ক ফোর্স গঠনের ওপর জোর দেওয়া হয়। তথ্য যুদ্ধ, সাইবার যুদ্ধ, হাইব্রিড যুদ্ধ, সরবরাহ ব্যবস্থাপনা, হতাহত উদ্ধার, এবং দুর্যোগ প্রতিক্রিয়ার মতো বিষয়গুলোতেও প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।
তৃতীয় পর্যায়: চূড়ান্তকরণ ও মূল্যায়ন
এই পর্যায়ে অংশগ্রহণকারীরা পূর্ববর্তী পর্যায়ের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে অপারেশনাল পরিকল্পনা চূড়ান্ত করেন এবং বাস্তব কার্যক্রমের পদ্ধতিগুলো পর্যালোচনা করেন। সিনব্যাক্স ২০২৪-এ ভারতের দেশীয় প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম ও প্রযুক্তি প্রদর্শিত হয়, যা "আত্মনির্ভরতা" উদ্যোগকে এগিয়ে নিয়ে যায়।
কৌশলগত উদ্দেশ্য
এই মহড়ার মাধ্যমে সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান এবং হাইব্রিড যুদ্ধের মতো আধুনিক নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জগুলোর মোকাবিলা করার লক্ষ্যে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। মূল উদ্দেশ্যগুলো হলো:
পারস্পরিক সামঞ্জস্য বৃদ্ধি: ভারত ও কাম্বোডিয়ার সেনাবাহিনী যৌথ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কার্যকরী সামঞ্জস্য ও সমন্বয় বাড়াতে চায়।
কার্যক্ষম দক্ষতা উন্নয়ন: গোয়েন্দা তথ্য বিনিময় ও নজরদারি কার্যক্রমের মাধ্যমে কৌশলগত সিদ্ধান্ত গ্রহণকে উন্নত করা।
বিশ্বাস ও বন্ধুত্ব গড়ে তোলা: এই মহড়া সাংস্কৃতিক বিনিময়ের মাধ্যমে উভয় দেশের সেনাদের মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও বোঝাপড়া বৃদ্ধি করে।
ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা: সাইবার যুদ্ধ, সরবরাহ ব্যবস্থাপনা এবং দুর্যোগ প্রতিক্রিয়ার মতো বিষয়গুলো আধুনিক সামরিক কার্যক্রমের পরিবর্তনশীল প্রকৃতি তুলে ধরে।
ভারত-কাম্বোডিয়া সম্পর্কের গভীরতা
ভারত এবং কাম্বোডিয়ার সম্পর্ক সাংস্কৃতিক, ধর্মীয় এবং ভাষাগত ঐতিহ্যের ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। কাম্বোডিয়ার বৌদ্ধ ঐতিহ্যে হিন্দু ধর্মের প্রভাব স্পষ্ট। ১৯৫২ সালে উভয় দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপিত হয়। ইউএনটিএসি-স্পন্সরকৃত ১৯৯৩ সালের নির্বাচনসহ কাম্বোডিয়ার পুনর্গঠনে ভারতের ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ। ভারত আঙ্গকর ওয়াট মন্দির পুনরুদ্ধারেও বিশেষ ভূমিকা রেখেছে।
অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক
ভারত এবং কাম্বোডিয়ার মধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্কও শক্তিশালী। ভারত থেকে কাম্বোডিয়ায় ওষুধ, গাড়ির যন্ত্রাংশ এবং চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি করা হয়, এবং কাম্বোডিয়া থেকে জৈব রাসায়নিক, পোশাক ও জুতা আমদানি করা হয়। সিনব্যাক্স ২০২৪ মহড়ার সাফল্য ভারত-কাম্বোডিয়া প্রতিরক্ষা সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছে। এটি শুধু সামরিক কার্যক্রমে দক্ষতা বাড়িয়েছে না, বরং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতেও ভূমিকা রেখেছে। সূত্র: ইন্ডিয়া নিউজ নেটওয়ার্ক।