তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের প্রধান সরবরাহকারী হিসেবে ওমান ভারতের জ্বালানি নিরাপত্তায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
ভারত ও ওমানের মধ্যকার কৌশলগত আলোচনার (আইওএসসিজি) ১৩তম রাউন্ডের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে ৩ ডিসেম্বর, ২০২৪, নয়াদিল্লিতে। বৈঠকটি যৌথভাবে পরিচালনা করেন ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (সিপিভি ও ওআইএ) অরুণ কুমার চ্যাটার্জি এবং ওমানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের রাজনৈতিক বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি শেখ খালিফা আলহারথি। এ বৈঠক উভয় দেশের মধ্যে সুদৃঢ় দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে আরও মজবুত করেছে।

কৌশলগত অংশীদারিত্ব পর্যালোচনা
বৈঠকে উভয় পক্ষ কৌশলগত অংশীদারিত্বের পুরো পরিসর পর্যালোচনা করেন, যার মধ্যে রয়েছে রাজনৈতিক সহযোগিতা, বাণিজ্য, জ্বালানি, প্রতিরক্ষা এবং সাংস্কৃতিক বিনিময়। তারা পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিষয় নিয়েও মতবিনিময় করেন। বৈঠকের সমাপ্তিতে উভয় পক্ষ সম্মত হয়েছেন যে, পরবর্তী আইওএসসিজি বৈঠক সুবিধাজনক সময়ে মাসকটে অনুষ্ঠিত হবে।

উদীয়মান খাতে সহযোগিতা বৃদ্ধি
ভারত-ওমান সম্পর্ক ৫,০০০ বছরেরও বেশি পুরনো ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক বন্ধনে পরিপূর্ণ। ১৯৫৫ সালে আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার পর ২০০৮ সালে এই সম্পর্ক কৌশলগত অংশীদারিত্বের স্বীকৃতি পায়। ১৩তম আইওএসসিজি বৈঠকে উদীয়মান খাতে সহযোগিতা বাড়ানোর জন্য বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক নিয়ে আলোচনা করা হয়:

বাণিজ্য ও বিনিয়োগ: উভয় পক্ষ অর্থনৈতিক সম্পর্ক শক্তিশালী করার এবং নতুন বিনিয়োগের সুযোগ অনুসন্ধানের গুরুত্ব পুনর্ব্যক্ত করে। ২০২৩ সালে ভারত ও ওমানের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ ১০ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছে।

জ্বালানি সহযোগিতা: ভারতের তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) একটি প্রধান সরবরাহকারী হিসেবে ওমান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। নবায়নযোগ্য জ্বালানি, সবুজ হাইড্রোজেন এবং সৌর প্রযুক্তিতে সহযোগিতা সম্প্রসারণের বিষয়ে আলোচনা করা হয়।

প্রতিরক্ষা ও সামুদ্রিক নিরাপত্তা: প্রতিরক্ষা অংশীদারিত্ব ভারত-ওমান সম্পর্কের অন্যতম ভিত্তি। ‘নাসিম আল বাহর’ এবং ‘আল নাগাহ’-এর মতো যৌথ সামরিক মহড়া উভয় দেশের সশস্ত্র বাহিনীর কার্যকারিতা বাড়িয়েছে।

ডিজিটাল ও প্রযুক্তিগত সহযোগিতা: সাইবার নিরাপত্তা এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মতো ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতার গুরুত্বও আলোচিত হয়।
সাংস্কৃতিক বিনিময় ও জনসংযোগ: ওমানে প্রায় ৬.৮৫ লাখ ভারতীয় প্রবাসীর উপস্থিতি উভয় দেশের মধ্যে সংস্কৃতিগত সম্পর্ককে আরও গভীর করেছে। ওমানের ২১টি ভারতীয় স্কুলে ৪০,০০০-এরও বেশি শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে।

উচ্চ পর্যায়ের সাক্ষাৎ ও প্রতিশ্রুতি
বৈঠকের সময় শেখ খালিফা আলহারথি ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্করের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেন। জয়শঙ্কর বাণিজ্য, বিনিয়োগ, প্রযুক্তি এবং মহাকাশ গবেষণায় সহযোগিতা বৃদ্ধির সম্ভাবনার কথা তুলে ধরেন। এক্সে একটি পোস্টে জয়শঙ্কর লেখেন, ‘ওমানের আন্ডার সেক্রেটারি খালিফা আলহারথিকে স্বাগত জানাতে পেরে আনন্দিত। বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও প্রযুক্তিতে আমাদের সহযোগিতার নতুন সুযোগ নিয়ে আলোচনা হয়েছে।’

পশ্চিম এশিয়ায় একটি কৌশলগত অংশীদার
পশ্চিম এশিয়ার অঞ্চলে ভারতের কৌশলগত অংশীদার হিসেবে ওমানের অবস্থান অনন্য। গালফ কোঅপারেশন কাউন্সিল (জিসিসি), আরব লিগ এবং ইন্ডিয়ান ওশান রিম অ্যাসোসিয়েশনের (আইওআরএ) সদস্য হিসেবে ওমান আঞ্চলিক বিষয়গুলিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ২০২৩ সালে ভারতের জি২০ সভাপতিত্বে ওমানের আমন্ত্রণ এই কৌশলগত অংশীদারিত্বের গুরুত্বকে আরও স্পষ্ট করে।

ভারতীয় প্রবাসীদের অবদান
ওমানের ভারতীয় সম্প্রদায় উভয় দেশের মধ্যে সম্পর্কের একটি মজবুত সেতু হিসেবে কাজ করছে। চিকিৎসক, প্রকৌশলী এবং শিক্ষাবিদদের মতো পেশাজীবীরা ওমানের উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছেন। ১৩তম আইওএসসিজি বৈঠক দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও গভীর করার এবং সবুজ জ্বালানি, উন্নত প্রযুক্তি ও মহাকাশ গবেষণায় নতুন সহযোগিতার পথ উন্মুক্ত করেছে। মাসকটে পরবর্তী বৈঠকটি উভয় দেশের সম্পর্ককে আরও উচ্চতায় নিয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। ভারত ও ওমানের এই কৌশলগত অংশীদারিত্ব আঞ্চলিক সমৃদ্ধি ও স্থিতিশীলতার একটি মজবুত ভিত্তি হিসেবে কাজ করছে। সূত্র: ইন্ডিয়া নিউজ নেটওয়ার্ক।