এই চুক্তি শিল্প ডিজাইনের নিবন্ধন এবং সুরক্ষার পদ্ধতি সহজ করার লক্ষ্যে গুরুত্বপূর্ণ বিধান প্রবর্তন করেছে।
ভারত আনুষ্ঠানিকভাবে রিয়াদ ডিজাইন আইন চুক্তি (ডিএলটি) স্বাক্ষর করেছে। এটি একটি ঐতিহাসিক চুক্তি যা বিভিন্ন বিচারব্যবস্থায় শিল্প ডিজাইন সুরক্ষার পদ্ধতিগত কাঠামোকে একীভূত ও সহজ করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে। প্রায় দুই দশকের আলোচনার পর বিশ্ব মেধাস্বত্ব সংস্থা (ডব্লিউআইপিও)-এর সদস্য রাষ্ট্রগুলোর দ্বারা গৃহীত এই চুক্তি বৈশ্বিকভাবে ডিজাইন নিবন্ধন প্রক্রিয়া উন্নত এবং সহজলভ্য করতে একটি বড় পদক্ষেপ।

মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর, ২০২৪) ভারতের বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয় চুক্তিটি স্বাক্ষরের ঘোষণা দিয়েছে। এতে দেশটির অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন এবং মেধাস্বত্ব সুরক্ষার ন্যায্য প্রবেশাধিকারের প্রতি প্রতিশ্রুতি প্রকাশ পেয়েছে। "রিয়াদ ডিজাইন আইন চুক্তির চূড়ান্ত আইন স্বাক্ষরের মাধ্যমে ভারত তার অগ্রগতির ধারা অব্যাহত রেখেছে এবং মেধাস্বত্ব সুরক্ষায় ন্যায্য প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে," মন্ত্রণালয় জানায়।

রিয়াদ ডিজাইন আইন চুক্তি কী নিয়ে এসেছে
রিয়াদ ডিজাইন আইন চুক্তি শিল্প ডিজাইনের নিবন্ধন এবং সুরক্ষা সহজ করার জন্য বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিধান প্রবর্তন করেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য:
সময়সীমার শিথিলতা: চুক্তি প্রার্থীকে পদ্ধতিগত শর্ত পূরণ করার জন্য আরও নমনীয় সময়সীমা প্রদান করে।
হারানো অধিকার পুনরুদ্ধার: নির্দিষ্ট শর্তের অধীনে সময়সীমা মিস করার কারণে হারানো অধিকার পুনরুদ্ধারের সুযোগ দেয়।
অগ্রাধিকার দাবি: প্রার্থীদের জন্য অগ্রাধিকারের দাবি সংশোধন বা যোগ করার সুযোগ দেয়।
সহজ পদ্ধতি: মালিকানা হস্তান্তর এবং লাইসেন্স নিবন্ধনের প্রক্রিয়া সহজ করে এবং একাধিক ডিজাইনকে একটি আবেদনপত্রে অন্তর্ভুক্ত করার সুযোগ দেয়।
ইলেকট্রনিক সিস্টেম: চুক্তি চুক্তিবদ্ধ পক্ষগুলোকে ইলেকট্রনিক শিল্প ডিজাইন সিস্টেম গ্রহণ করতে এবং অগ্রাধিকার ডকুমেন্টের ইলেকট্রনিক বিনিময়কে উৎসাহিত করে।
এই বিধানগুলো প্রশাসনিক জটিলতা কমিয়ে ব্যবসা এবং উদ্ভাবকদের জন্য বৈশ্বিক ডিজাইন সুরক্ষা আরও সহজলভ্য করতে সাহায্য করবে।

ভারতের ক্রমবর্ধমান শিল্প ডিজাইন খাত
চুক্তিটি স্বাক্ষর করার সময় ভারতের শিল্প ডিজাইন নিবন্ধনে উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি লক্ষ্য করা গেছে। গত এক দশকে ডিজাইন নিবন্ধন তিন গুণ বেড়েছে, যেখানে শুধুমাত্র গত দুই বছরে দেশীয় ফাইলিং ১২০% বৃদ্ধি পেয়েছে। চুক্তিটি প্রক্রিয়াগুলো আরও সহজ করবে এবং উদ্ভাবনে উৎসাহ যোগাবে। চুক্তির ডিজিটালাইজেশনের উপর জোর দেওয়া ভারতের মেধাস্বত্ব অবকাঠামো আধুনিকীকরণের বিস্তৃত প্রচেষ্টার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

ডব্লিউআইপিও, যা জাতিসংঘের একটি বিশেষ সংস্থা, মেধাস্বত্ব পরিষেবা, নীতি এবং সহযোগিতার বৈশ্বিক প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করে। ১৯৩টি সদস্য রাষ্ট্র নিয়ে গঠিত ডব্লিউআইপিও-এর লক্ষ্য একটি ভারসাম্যপূর্ণ এবং কার্যকর আন্তর্জাতিক মেধাস্বত্ব ব্যবস্থা গড়ে তোলা, যা উদ্ভাবন এবং সৃজনশীলতাকে উৎসাহিত করে।

বিশ্ব মেধাস্বত্ব ব্যবস্থায় ভারতের ভূমিকা
রিয়াদ ডিজাইন আইন চুক্তি স্বাক্ষর করে ভারত বৈশ্বিক মেধাস্বত্ব ব্যবস্থায় সক্রিয় অংশগ্রহণকারী হিসেবে তার অবস্থান শক্তিশালী করেছে। চুক্তির প্রবর্তন ভারতীয় ব্যবসা এবং ডিজাইনারদের আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশ সহজ করার পাশাপাশি তাদের সৃষ্টিকে সুরক্ষিত করার জন্য সহজ প্রক্রিয়া প্রদান করবে।

শিল্প ডিজাইন উদ্ভাবন এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে ক্রমবর্ধমান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এই চুক্তিতে ভারতের প্রতিশ্রুতি একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক চিহ্নিত করেছে। মেধাস্বত্ব সুরক্ষার প্রতি ভারতের ক্রমবর্ধমান গুরুত্ব এবং ভবিষ্যতপ্রদর্শী আন্তর্জাতিক চুক্তি গ্রহণের ফলে সৃজনশীল ও শিল্প খাতে বৈশ্বিক প্রতিযোগিতামূলক অবস্থান আরও শক্তিশালী হবে।

রিয়াদ ডিজাইন আইন চুক্তি বৈশ্বিক শিল্প ডিজাইন সুরক্ষার ক্ষেত্রে একটি রূপান্তরকারী পদক্ষেপ। ভারতের জন্য এই চুক্তি শুধু তার মেধাস্বত্ব কাঠামোকে শক্তিশালী করবে না বরং একটি বৈশ্বিক উদ্ভাবন নেতৃস্থানীয় দেশ হিসেবে তার দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে কাজ করবে। চুক্তির বিধান কার্যকর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ভারতীয় ব্যবসা এবং উদ্ভাবকেরা শিল্প ডিজাইন সুরক্ষার জন্য আরও সহজ, কার্যকর এবং সহজলভ্য একটি ব্যবস্থা উপভোগ করতে পারবে, যা সৃজনশীলতা এবং প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধি করবে। সূত্র: ইন্ডিয়া নিউজ নেটওয়ার্ক