এনএইচআরসি বৈশ্বিক অঙ্গনে অভিজ্ঞতা ভাগাভাগির মাধ্যমে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক পরিবেশ তৈরিতে অঙ্গীকারবদ্ধ
ভারতের জাতীয় মানবাধিকার কমিশন (এনএইচআরসি) ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের (এমইএ) যৌথ উদ্যোগে ছয়দিনব্যাপী "ইন্ডিয়ান টেকনিক্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক কো-অপারেশন (আইটিইসি) এক্সিকিউটিভ সক্ষমতা বৃদ্ধি কর্মসূচি" শুরু হয়েছে। সোমবার, ১১ নভেম্বর ২০২৪-এ কর্মসূচিটির উদ্বোধন করা হয়, যা গ্লোবাল সাউথ অঞ্চলের মানবাধিকার চর্চা শক্তিশালী করার লক্ষ্য নিয়ে পরিচালিত হচ্ছে।

মালদ্বীপ, মঙ্গোলিয়া, মিয়ানমার, নেপাল, ফিলিপাইন, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড এবং জর্ডানের আটটি দেশের জাতীয় মানবাধিকার প্রতিষ্ঠানের (এনএইচআরআই) উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা এই কর্মসূচিতে অংশ নিতে নয়াদিল্লিতে জড়ো হয়েছেন। কর্মসূচিটি ১১ নভেম্বর থেকে ১৬ নভেম্বর ২০২৪ পর্যন্ত চলবে।

কর্মসূচির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য
আইটিইসি এক্সিকিউটিভ সক্ষমতা বৃদ্ধি কর্মসূচিটি গ্লোবাল সাউথের এনএইচআরআই কর্মকর্তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী সাজানো হয়েছে। কর্মসূচির মূল লক্ষ্য হলো মানবাধিকার প্রচার, সুরক্ষা এবং প্রতিষ্ঠানগত সক্ষমতা বৃদ্ধি। গত তিন দশকের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে এনএইচআরসি এই কর্মসূচির মাধ্যমে মানবাধিকারের ব্যবহারিক এবং নৈতিক দিকগুলোতে গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা প্রদান করবে। ভারতের সভ্যতার সহানুভূতি ও মমত্ববোধের ওপর ভিত্তি করে মানবাধিকারের প্রচার ও সুরক্ষার নীতি তুলে ধরা হবে।

কর্মসূচিটি জ্ঞানের ভাগাভাগি এবং সক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর মধ্যে সহযোগিতার পরিবেশ তৈরি করার উপর জোর দেয়। এখানে বর্তমান মানবাধিকার ইস্যু নিয়ে আলোচনা করা হবে এবং অংশগ্রহণকারী দেশগুলো তাদের সেরা চর্চা, উদ্ভাবনী পদ্ধতি, এবং সম্মিলিত কৌশল ভাগ করবে।

কর্মসূচির প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলোর মধ্যে রয়েছে:

১/ এনএইচআরসির অনলাইন অভিযোগ ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি প্রদর্শন, যা অভিযোগ গ্রহণ, পর্যবেক্ষণ, এবং সমাধান প্রক্রিয়াকে সহজ করে।
২/ মানবাধিকার সম্পর্কিত উদীয়মান চ্যালেঞ্জ, যেমন ব্যবসার প্রভাব, প্রযুক্তিগত উন্নতি, এবং টেকসই উন্নয়নের গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা।
৩/ অত্যাধুনিক তদন্ত কৌশল শেখানোর ব্যবস্থা।
৪/ অংশগ্রহণকারী এবং বিশেষজ্ঞ বক্তাদের ভূমিকা

কর্মসূচিতে বিশেষজ্ঞ বক্তারা মানবাধিকার ব্যবস্থাপনার বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করবেন। বক্তাদের তালিকায় রয়েছেন:

সাবেক বিচারপতি এম.এম. কুমার, এনএইচআরসির সাবেক সদস্য। ড. জ্ঞানেশ্বর এম. মুলায় ও রাজীব জৈন, যারা মানবাধিকারের প্রসারে এনএইচআরসির ভূমিকা তুলে ধরবেন। এনএইচআরসি মহাসচিব ভরত লাল, যিনি ভারতের প্রশাসনিক ও বিচারব্যবস্থার প্রেক্ষাপটে এনএইচআরসির ভূমিকা ব্যাখ্যা করবেন। জাতিসংঘে ভারতের সাবেক রাষ্ট্রদূত অশোক কুমার মুখার্জি, যিনি বৈশ্বিক মানবাধিকার চর্চায় ভারতের অবদান সম্পর্কে আলোকপাত করবেন।

জাতিসংঘের রেসিডেন্ট কোঅর্ডিনেটর শমবি শার্প, যিনি মানবাধিকারের আন্তর্জাতিক মান এবং লক্ষ্য নিয়ে আলোচনা করবেন। কর্মসূচিতে আলোচিত বিষয়গুলো শুধুমাত্র তাত্ত্বিক জ্ঞান দেবে না, বরং অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে গঠনমূলক সংলাপের সুযোগ সৃষ্টি করবে। এতে আন্তঃসীমান্ত সহযোগিতার পথ প্রশস্ত হবে।

গ্লোবাল সাউথের জন্য মানবাধিকার প্রচারে একটি বিস্তৃত ভিশন
এনএইচআরসি’র এই কর্মসূচি গ্লোবাল সাউথ অঞ্চলের মানবাধিকার প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে শক্তিশালী সম্পর্ক তৈরির মাধ্যমে তাদের কাজের পরিধি বাড়ানোর উদ্দেশ্যকে এগিয়ে নিয়ে যায়।

আইটিইসি’র মতো উদ্যোগের মাধ্যমে ভারত কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করার পাশাপাশি তার অংশীদার দেশগুলোর মধ্যে টেকসই মানবাধিকার চর্চা প্রচার করে। ২০২৩ সালে মালদ্বীপের মানবাধিকার কমিশনের জন্য আয়োজিত আবাসিক প্রশিক্ষণ কর্মসূচি ছিল এমন একটি উদ্যোগের সফল উদাহরণ।

ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
কর্মসূচিটি শুধুমাত্র জ্ঞান বিনিময়ের একটি প্ল্যাটফর্ম নয়; এটি অন্তর্ভুক্তিমূলক, টেকসই, এবং আন্তঃসাংস্কৃতিক বোঝাপড়ার উপর ভিত্তি করে মানবাধিকারের প্রসারে এনএইচআরসি’র দীর্ঘমেয়াদী প্রতিশ্রুতি প্রকাশ করে। অংশগ্রহণকারীরা এই কর্মসূচির মাধ্যমে তাদের নিজ নিজ দেশে মানবাধিকার সুরক্ষার নতুন পদ্ধতি প্রয়োগ করতে সক্ষম হবেন।

এটি প্রত্যাশা করা হচ্ছে যে কর্মসূচিটি একটি শক্তিশালী মানবাধিকার সংরক্ষণকারীদের নেটওয়ার্ক গড়ে তুলবে, যারা নিজ নিজ অঞ্চলে মানবাধিকার রক্ষার নেতৃত্ব দেবেন। সূত্র: ইন্ডিয়া নিউজ নেটওয়ার্ক