সংযুক্ত আরব আমিরাত জানিয়েছে, চলতি সপ্তাহে সুদানের রাজধানী খার্তুমে তাদের রাষ্ট্রদূতের বাসভবনে হামলার ঘটনা ঘটেছে।
সুদানে নিরাপত্তা পরিস্থিতির অবনতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ভারত, যেখানে চলতি সপ্তাহে খার্তুমে সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাষ্ট্রদূতের বাসভবনে হামলার খবর পাওয়া গেছে। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এর মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক আইনের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর আহ্বান জানিয়ে কূটনৈতিক ভবনের অব্যাহত নিরাপত্তা রক্ষার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন।
বুধবার (২ অক্টোবর, ২০২৪) গণমাধ্যমের প্রশ্নের জবাবে জয়সওয়াল বলেন, “আমরা সুদানের নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। যে কোনো সংঘাতের মধ্যে কূটনৈতিক ভবনের অব্যাহত নিরাপত্তা রক্ষা করা জরুরি, এবং খার্তুমে সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাষ্ট্রদূতের বাসভবনে হামলার খবর গভীর উদ্বেগজনক।”
সুদানে সংঘর্ষ সাম্প্রতিক মাসগুলোতে আরও তীব্র হয়েছে, যা মূলত সুদানের সশস্ত্র বাহিনী এবং আধাসামরিক র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস এর মধ্যে সংঘর্ষের ফলে সৃষ্ট। সামরিক বাহিনীগুলোর মধ্যে ব্যর্থ আলোচনার পর এই সংঘর্ষ শুরু হয়, যা খার্তুম এবং অন্যান্য অঞ্চলে ব্যাপক সহিংসতার জন্ম দিয়েছে। চলমান সংঘর্ষে দেশটি অস্থিতিশীল হয়ে পড়েছে এবং এতে বিভিন্ন আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পক্ষও যুক্ত হয়েছে।
সাম্প্রতিক সংঘর্ষের সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ একটি ঘটনা হলো খার্তুমে সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাষ্ট্রদূতের বাসভবনে হামলা। সংযুক্ত আরব আমিরাত এই ঘটনার নিন্দা জানিয়ে সুদানের সামরিক বাহিনীর একটি বিমানকে এই হামলার জন্য দায়ী করেছে, যা ভবনটিতে ব্যাপক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪) সংযুক্ত আরব আমিরাতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে এই হামলাকে “ঘৃণ্য” আখ্যা দিয়ে এটিকে আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক নিয়মের একটি মারাত্মক লঙ্ঘন হিসেবে অভিহিত করেছে এবং সুদানের সামরিক বাহিনীকে পূর্ণ দায়িত্ব নিতে আহ্বান জানিয়েছে।
এই হামলা সুদান এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের মধ্যে ইতোমধ্যেই বিদ্যমান উত্তেজনাকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে। ঐতিহাসিকভাবে, সংযুক্ত আরব আমিরাত সুদানের কিছু গোষ্ঠীকে সমর্থন করে আসছে, বিশেষ করে সাবেক প্রেসিডেন্ট ওমর আল-বশিরের পতনের পর। অপরদিকে সুদানের সামরিক বাহিনী আরএসএফকে অর্থায়ন ও অস্ত্র সরবরাহের জন্য সংযুক্ত আরব আমিরাতকে দোষারোপ করেছে, যা সুদানের অভ্যন্তরীণ বিভাজনকে আরও গভীর করেছে। যদিও সুদানের সামরিক বাহিনী রাষ্ট্রদূতের বাসভবনে হামলার অভিযোগ অস্বীকার করেছে, তবে এসব অভিযোগ দুই দেশের মধ্যে গভীর বিরোধের প্রতিফলন।
সুদানে সংযুক্ত আরব আমিরাতের অংশগ্রহণটি রেড সি অঞ্চলে অন্যান্য আঞ্চলিক শক্তির প্রভাব প্রতিহত করার বৃহত্তর কৌশলের অংশ, যেখানে ইরানের প্রভাবও বিদ্যমান। সুদানের রাজনীতিতে সংযুক্ত আরব আমিরাতের ভূমিকা দেশটির অভ্যন্তরীণ সংঘাতকে জটিল করেছে এবং এর ফলে ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করেছে।
সুদানে বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে ভারতের প্রতিক্রিয়া আন্তর্জাতিক উদ্বেগের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ, বিশেষ করে কূটনৈতিক মিশনগুলোর সুরক্ষা সংক্রান্ত। ভিয়েনা কনভেনশন অনুযায়ী, কূটনৈতিক ভবনগুলোকে সব সময়, এমনকি সংঘাতকালীন সময়েও সুরক্ষিত রাখতে হবে। দূতাবাস এবং কূটনৈতিক বাসভবনে হামলাকে আন্তর্জাতিক আইনের গুরুতর লঙ্ঘন হিসেবে দেখা হয় এবং এ ধরনের ঘটনা কূটনৈতিক সম্পর্কের আরও অবনতি ঘটাতে পারে।
সংযুক্ত আরব আমিরাত ঘোষণা করেছে যে তারা আরব লিগ, আফ্রিকান ইউনিয়ন, এবং জাতিসংঘের কাছে এই বিষয়টি উত্থাপন করবে এবং কূটনৈতিক নিয়ম লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে সম্মিলিত পদক্ষেপের আহ্বান জানাবে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে, যেখানে আঞ্চলিক অস্থিতিশীলতার আশঙ্কা রয়েছে।
সুদানে সংঘর্ষ বাড়ার সাথে সাথে কূটনৈতিক মিশনগুলোর নিরাপত্তা একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে পরিণত হয়েছে। সংঘাতের সময় আন্তর্জাতিক আইন এবং নিয়ম মেনে চলার গুরুত্বের ওপর ভারতের আহ্বান এই বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরেছে। পরিস্থিতি এখনও অস্থিতিশীল এবং আগামী কয়েক সপ্তাহে বিভিন্ন দেশের কূটনৈতিক তৎপরতা বাড়তে পারে যাতে তারা তাদের স্বার্থ রক্ষা এবং অঞ্চলের স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে পারে। সূত্র: ইন্ডিয়া নিউজ নেটওয়ার্ক
ReplyForward |