দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় করা এবং কৌশলগত অংশীদারিত্বকে জোরদার করার লক্ষ্যে দিল্লীতে ব্রাজিলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী
দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় করা এবং কৌশলগত অংশীদারিত্বকে জোরদার করার লক্ষ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ হিসেবে, ব্রাজিলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাউরো ভিয়েরা ২৫ থেকে ২৮ আগস্ট ২০২৪ পর্যন্ত ভারত সফরে রয়েছেন। নয়াদিল্লিতে অবস্থানকালে, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভিয়েরা এবং ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর ২৭ আগস্ট ২০২৪-এ ৯ম ভারত-ব্রাজিল যৌথ কমিশন মিটিং (জেসিএম) এর সহ-সভাপতিত্ব করবেন।

"ব্রাজিল এ বছর জি২০-এর সভাপতিত্ব করায়, মন্ত্রীরা আলোচনা করবেন কিভাবে এই দুই দেশ ট্রোইকার সদস্য হিসেবে গত বছর ভারতের সভাপতিত্বের জি২০-এর গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলি এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে," ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় (এমইএ) শনিবার (২৪ আগস্ট ২০২৪) এ সফরের ঘোষণা করার সময় জানায়।

এই সফরটি ভারত এবং ব্রাজিলের মধ্যে দৃঢ় এবং বহুমুখী সম্পর্ককে প্রতিফলিত করে, যেখানে এই দুই উদীয়মান বৈশ্বিক শক্তি আন্তর্জাতিক এবং বহুপাক্ষিক ফোরামে ক্রমশ একে অপরের সাথে মিলিত হচ্ছে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাউরো ভিয়েরার এই সফরটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়ে ঘটছে, যেখানে উভয় দেশই পরিবর্তনশীল বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে নিজেদের অবস্থানকে সামঞ্জস্য করার চেষ্টা করছে।

এই দুই দেশের সম্পর্ক গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, পারস্পরিক সম্মান, এবং বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জের সম্মিলিতভাবে মোকাবিলায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধতার উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। আসন্ন সফরটি ২০০৬ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিষ্ঠিত কৌশলগত অংশীদারিত্বকে নতুন গতি প্রদান করবে, এবং বাণিজ্য, প্রতিরক্ষা, প্রযুক্তি, এবং টেকসই উন্নয়নের মতো বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতার নতুন সুযোগ সৃষ্টি করবে।

৯ম ভারত-ব্রাজিল যৌথ কমিশন মিটিং: একটি গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক উদ্যোগ
ভারত-ব্রাজিল যৌথ কমিশন মিটিং (জেসিএম) দ্বি-বার্ষিকভাবে অনুষ্ঠিত হয় এবং এটি উভয় দেশের জন্য বিভিন্ন ক্ষেত্রে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার অগ্রগতি পর্যালোচনা করার এবং ভবিষ্যতের কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্কের রূপরেখা নির্ধারণের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করে।

এ বছরের জেসিএম-এ মহাকাশ, বিমান চলাচল, বায়োফুয়েল, এবং প্রতিরক্ষা প্রযুক্তির মতো ক্ষেত্রগুলিতে সহযোগিতা আরও গভীর করার ওপর জোর দেওয়া হবে বলে আশা করা হচ্ছে। উভয় মন্ত্রী বাণিজ্য ও বিনিয়োগ প্রবাহ বাড়ানোর, প্রযুক্তিগত বিনিময়কে প্রমোট করার এবং উভয় দেশের বৈজ্ঞানিক সম্প্রদায়ের মধ্যে আরও ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক স্থাপনের উপায় নিয়ে আলোচনা করবেন।

এই মিটিংটিতে ডিজিটাল অর্থনীতি, সবুজ শক্তি, এবং উদ্ভাবন ক্ষেত্রেও নতুন সহযোগিতার সুযোগগুলি অনুসন্ধান করা হবে, যা ভারত-ব্রাজিল অংশীদারিত্বের গতিশীল এবং বিকাশমান প্রকৃতিকে প্রতিফলিত করে।

জি২০ ট্রোইকা: বৈশ্বিক শাসন ব্যবস্থায় যৌথ প্রচেষ্টা
মন্ত্রীর মাউরো ভিয়েরার সফরটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি ব্রাজিলের জি২০ সভাপতিত্বের সাথে মিলে গেছে, যা বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির একটি সম্মানজনক গ্রুপ। ভারতের সাথে জি২০ ট্রোইকা সদস্য হিসেবে, ব্রাজিল বৈশ্বিক অর্থনৈতিক এজেন্ডা এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ভারতের কর্মকর্তাদের সাথে তার বৈঠকে, যার মধ্যে জেসিএমও অন্তর্ভুক্ত, রাষ্ট্রদূত ভিয়েরা ভারতের ২০২৩ সালের জি২০ সভাপতিত্বের মূল সিদ্ধান্তগুলি এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কৌশল নিয়ে আলোচনা করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

ব্রাজিল ১৮-১৯ নভেম্বর ২০২৪-এ রিও ডি জেনিরোতে জি২০ নেতাদের শীর্ষ সম্মেলনের আয়োজন করবে। আসন্ন শীর্ষ সম্মেলন উভয় দেশের জন্য জলবায়ু পরিবর্তন, ডিজিটাল রূপান্তর, এবং টেকসই উন্নয়নের মতো গুরুত্বপূর্ণ বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সহযোগিতা করার সুযোগ প্রদান করবে। আলোচনাগুলিতে বিশেষ করে গ্লোবাল সাউথের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং স্থিতিস্থাপক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হবে, যেখানে ভারত এবং ব্রাজিল উভয়ই উন্নয়নশীল দেশগুলির স্বার্থের জন্য নেতৃত্ব দিচ্ছে।

ভারত-ব্রাজিল সম্পর্কের অর্থনৈতিক মাত্রা সাম্প্রতিক বছরগুলিতে উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি পেয়েছে, এবং এই সফরের সময় উভয় পক্ষ বাণিজ্য ও বিনিয়োগের সম্পর্ক আরও শক্তিশালী করার উপায়গুলি অনুসন্ধান করবে, বিশেষ করে কৃষি, শক্তি, এবং ফার্মাসিউটিক্যালসের মতো গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রগুলিতে আরও সহযোগিতার উপর জোর দেওয়া হবে।

গত বছর নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত জি২০ মিটিংয়ে ব্রাজিল-ভারত বিজনেস ফোরামের উদ্বোধন এ দিকটি শক্তিশালী করতে একটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ হিসেবে কাজ করেছে। ফোরামটি এরপর থেকে উভয় দেশের ব্যবসায়িক নেতাদের জন্য নতুন সহযোগিতার সুযোগগুলি অন্বেষণ করার এবং বাণিজ্যিক সম্পর্কগুলি আরও শক্তিশালী করার প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করছে। মন্ত্রী ভিয়েরার আসন্ন সফরটি এই উদ্যোগটিকে আরও এগিয়ে নেওয়ার আলোচনা প্রত্যক্ষ করবে বলে আশা করা হচ্ছে, যেখানে বেসরকারী খাতের আরও বেশি সম্পৃক্ততা এবং দুই দেশের মধ্যে ব্যবসা করার সুবিধা বৃদ্ধির দিকে মনোনিবেশ করা হবে।

দ্বিপাক্ষিক এবং আঞ্চলিক বিষয়গুলির বাইরেও, এই সফরটি উভয় দেশের জন্য জলবায়ু পরিবর্তন, শক্তি নিরাপত্তা, এবং টেকসই উন্নয়নের মতো বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জগুলির সম্মিলিতভাবে মোকাবিলায় তাদের শেয়ার্ড দায়িত্ব নিয়ে আলোচনা করার একটি সুযোগ প্রদান করবে। সূত্র: ইন্ডিয়া নিউজ নেটওয়ার্ক